গ্যালারি

রেসিপিঃ মুগ ডালের খিচুড়ি (বৈশাখ স্পেশাল, গল্প না পড়লে মিস!)


রাত অনেক হয়েছে! এত রাতে জেগে থাকা উচিত নয়। কিন্তু নেটের নেশা কঠিন নেশা। টিভি দেখা সাথে নেট! আহ… ফেইসবুকে আড্ডা! ওহ…। কেমন জীবন কাটাচ্ছি? মাঝে মাঝে ভাবনা হয়! আবার এও ভাবি, জীবন আর কত দিনের! এই সামান্য জীবনে তো কিছুই করা হল না, নেটে আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে সামান্য কিছু রেসিপিই বাংলায় লিখে যাচ্ছি, এটা তো কিছু হচ্ছেই! বাস্তব জীবনে না হয় কিছু হল না, নেটের জীবনে তো কিছু একটা হচ্ছেই! হা হা হা…

হ্যাঁ, আমি নেটে যেভাবে এত গুলো (এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫০টি) রেসিপি লিখেছি, তা দুনিয়াতে আর কেহ লিখেছে কি না তা আমার জানা নেই এবং  এই ধারাবাহিকভাবে আপনাদের ছবির মাধ্যমে দেখিয়ে দেয়া এই দুনিয়াতে আর কেহ করেছে কি না, তাও আমার জানা নেই! মানে এইভাবে রেসিপি লিখার লোক দুনিয়াতে আমি একাই! হা হা হা… নিজের কারবার নিজেই বলে ফেললাম!

আমার এইভাবে রেসিপি আপনারা কেন পছন্দ করেন তা আমি জানি! হা হা হা… প্রথমেই আসি যারা সর্ট রেসিপি দেন তাদের এবং আমার মধ্যে পার্থক্য? আমার রেসিপিতে ধারাবাহিক ছবি এবং বর্ননা থাকে যা আপনাদের আরো বেশি চোখে ধরিয়ে দেয়। এতে আপনারা রান্নাটা সহজে দেখে ফেলেন এবং ভাল লাগে। চাইলে প্রিন্ট করে বা লিখে (যদিও এই যুগে কলম আর নাই!) এই ধারাবাহিক রেসিপি নিয়ে রান্নাঘরে যেতে পারেন। রান্নায় ভুল হবার চান্স থাকে না। সুতারাং রেসিপি দেখে রান্না সহজ বা ইউজার ফ্রেন্ডলি!

আর অন্য দিকে আসি মোশান রেসিপি নিয়ে! আপনারা যারা টিভিতে বা ডিভিডিতে রেসিপি দেখে থাকেন তাদের অনেক কষ্ট করে রান্নার ধারাবাহিক মনে রাখতে হয় বা একবার চোখের সামনে দেখে থাকেন! এতে রান্নায় মনের কনফিডেন্স থাকে না। নুতন বা রান্নায় আগ্রহীরা টিভি বা মোশান দেখে রান্না করতে পারেন না, এটা পারে একমাত্র অভিজ্ঞ রান্নাকারীরা। তাই আমার রেসিপি দেখলে, আপনারা মনের কনফিডেন্স পান। হা হা হা… এখন আবশ্য নানান ডিভাইস/ গ্রেজেট/ মোবাইল আছে যা ওয়াইফাই দিয়ে বা সিম দিয়ে চলে, এই সকল ডিভাইস এখন রান্নাঘরে যাচ্ছে, যাতে আমাকে আপনারা সহজে দেখতে পাচ্ছেন।

যারা রান্না জানেন তাদের কাছেও আমি ভাল। কিন্তু কেন? হা হা হা… আসলে আমাদের এমন সহজ সরল রান্না গুলো হারিয়ে যাচ্ছে! বিশেষ করে যারা বিদেশ থাকেন তারা তাদের খাবার দাবারে বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়েছেন, অনেকে বাংলা রান্নাগুলো আর খেতে পারছেন না! কঠিন জীবন, পারিবারিক কঠিন আর্থিক সমস্যা, কিংবা বেশী ধনী হয়েছেন বলে এখন আর বাংলা খাবারের ধারে কাছেও নাই! ছোট বেলায় খেয়েছেন, এমন রান্না কি আপনি ভুলে থাকতে পারবেন! না না না…।

যাই হোক, অনেক গল্প করে ফেললাম। বৈশাখে খিচুড়ি খেতে পারেন, মুগ ডালের খিচুড়ি! কি জিবে জল এল কি!

উপকরনঃ
– চিকন পোলাউ চালঃ হাফ কেজি
– এক পোয়া (এক কেজির চারভাগের এক ভাগ) মুগের ডাল
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ হাফ কাপ
– আদা বাটাঃ এক টেবিল চামচ
– কয়েকটা এলাচি
– কয়েক পিস দারুচিনি
– হাফ চামচ হলুদ গুড়া
– এক চিমটি লাল মরিচ গুড়া (এটা শুধু রঙ্গের জন্য দেয়া হয়েছে, উজ্জল হলুদ দেখাবে)
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– পরিমান মত লবন
– পরিমান মত তেল/ পানি

প্রনালীঃ
চাল ডাল তৈরীঃ

প্রথমে মুগ ডালকে হালকা ভেঁজে নিতে হবে এবং পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।


এর পর চাল ডাল মিশিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রেখে দিন।

মুল রান্নাঃ

তেল গরম করে তাতে লবন যোগে পেঁয়াজ কুঁচি ভেঁজে নিন। এরপর  কয়েকটা কাঁচা মরিচ, আদা, এলাচি ও দারচিনি দিয়ে ভাল করে ভাজুন।


এক কাপ পানি দিন এবং হলুদ, মরিচ দিয়ে দিন।


ভাল করে নাড়িয়ে কষান। মশলার ঘ্রান বের হতে দিন। মাশাল্লাহ, তেল উঠে এমন চমৎকার ঝোল হয়ে যাবে।


এবার চাল ডাল দিয়ে দিন।


হাল্কা আঁচে ভাল করে ভাজুন। লক্ষ রাখবেন পাতিলের তলায় যেন না লেগে যায়। নাড়ান! সব সময় কাঠে খুন্তি ব্যবহার করবেন।


এবার পরিমান মত পানি (চালের অবস্থা বুঝে) দিন। চালের উপরে এক ইঞ্চির মত হলে ভাল। বেশি পানি দিলে খিচুড়ি বেশি নরম হয়ে যাবে। (লবন দেখে নিন। পানি কটা হতে হবে! লবন লাগলে দিন।)


এবার ঢাকনা দিয়ে মিনিট ২০ অপেক্ষা করুন। মাঝে মাঝে ঢাকনা উল্টে দেখতে ভুলবেন না! পানি কম বেশি হলে এই দেখা কাজে লাগতে পারে।


শেষের দিকে এমন করে দম দিতে পারেন। শহুরে দম, পাতিলের নীচে তাওয়া (ব্যাপারটা আশা করি জানেন)


ব্যস রেডী, তৈয়ার!


হয়ে গেল মুগ ডালের খিচুড়ি, দেখে বলুন কত সহজ। আপনিও পারবেন, শুধু দরকার ইচ্ছা, ভালবাসা।

মাঝে মাঝে ভাতের বদলে এমন খিচুড়ি রান্না করতে পারেন। সবাই নিঃসন্দেহে পছন্দ করবেই। বিশেষ করে বিশেষ দিনে! বৈশাখের প্রথম দিনে, সাথে যদি থাকে ইলিশ মাছ ভাজা! আহ…

(রান্না করে শুধু নিজেরা খাবেন না, গরীব দুঃখী মানুষের কথা ভুলে গেলে চলবে না, নিজের ব্যচেলর আত্মীয়, কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া ভাই/বোন/ভাতিজা/ভাতিজিকে বাসায় নিয়ে আসুন। একটু ভাল খাবার ওদের দরকার! হল, হোটেল বা মেসে খেতে খেতে ওরা বাসাবাড়ীর রান্না ভুলেই যাচ্ছে! ওদের দিকে তাকান!)

সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। বাংলাদেশী/পরবাসী সবার জন্য শুভ নববর্ষ। ভারতের বাংলাভাষার রেসিপি প্রিয় পাঠক পাঠিকাদেরও আন্তরিক শুভেচ্ছা, শুভ নববর্ষ।  দেশ বিদেশ যে যেখানে আছেন, ভাল থাকুন। ভাল কাটুক আমাদের সবার জীবন। আপনারা আছেন বা আমাদের রেসিপি দেখেন বলে আমরাও আছি! আপনারা না থাকলে আমরা কার কাছে রেসিপির কথা বলবো?

আবারো উদরাজী পরিবারের শুভেচ্ছা।

19 responses to “রেসিপিঃ মুগ ডালের খিচুড়ি (বৈশাখ স্পেশাল, গল্প না পড়লে মিস!)

  1. আমি আপনার রেসিপি পছন্দ করি মূলত ঘরোয়া স্টাইলের জন্য……শুভেচ্ছা রইলো এবং আগামীতে আরো নতুন রেসিপি’র অপেক্ষা…

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ অজ্ঞাত ভাই। হা, আমি মুলত আমাদের দেশের ঘরের রান্না নিয়েই উৎসাহী। আমি মনে করি, আমাদের এই ধরনের রান্না গুলো রান্না করতে জানলে দুনিয়ার সব রান্নাই সম্ভব।

      আমাদের চেষ্টা চলবে। আশা করি আমাদের সাথে থাকবেন। শুভেচ্ছা।

      Like

  2. Congarculation, to complete 350 recepi … ..
    1st Baishak” is really a memorabal day..it is parralaly enjoyable and sorrowness.
    Enyoyable for all… but sorrowness for me..bkz I lost my Mother in that date…
    ..Radowan.

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ রেদোয়ান ভাই, প্রহেলা বৈশাখ আপনার মায়ের মৃত্যু দিন জেনে আমরাও কষ্ট পেলাম। আসলে এটা দুনিয়ার একটা বিশেষ তামাশা! আনন্দ ও বেদনা পাশাপাশি। এই দুনিয়াতে মায়ের চেয়ে আর কেহ আপন হয় বলে আমার জানা নেই।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. আপনার লেখায় কখনো কমেন্ট করা হয়ে ওঠেনি। খুব ভাল লাগে ভাই। আমি নিজেও রান্নাবান্না করতে খুব ভালোবাসি। লেখা হয়ে ওঠে না। আপনি অনেকের অনেক সাহায্য করেছেন আপনার লেখা দিয়ে। সাধুবাদ জানাই। আর অনেক অনেক শুভকামনা রইল এই ছোটবোনটির পক্ষ থেকে। শুভ নববর্ষ ১৪২০।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ ছোট বোন পুত্তলিকা। আপনাকে শুভেচ্ছা আমাদের রেসিপি ব্লগে। আপনার কমেন্ট দেখে আমরা আনন্দিত হয়েছি। আশা করি সামনের সময়েও আমাদের সাথে থাকবেন।
      আপনার জন্যও নুতন বছরের শুভেচ্ছা।
      ভাল থাকুন।

      Like

  4. Sudu Mug Daler khuchuri kokownow khayachi kina mony porche na. Tobe eaber amar wife ke ranna korte bolbo.

    Liked by 1 person

  5. apnar recipe dekhe ei khichuri ta matro radhlam..khete bhalo hoyeche alhamdulillah .

    Liked by 1 person

  6. দুদিন হলো বুয়া নেই। আজ আবার বাসায় একা। তাই নিজেই খিচুড়ি করে ফেললাম। আপনার রেসিপি খুব কাজে দিলো। ধন্যবাদ রইলো, শুভেচ্ছা রইলো।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ মেহেদী ভাই।
      আপনারাই আমাদের রেসিপির টার্গেট। আপনারা আমাদের রান্না দেখে রান্না করলে আমরা খুশি হই। রান্না একটা ভালবাসা, এই ভালবাসা থেকে নিজদের বঞ্চিত করবেন না। রান্না জেনে নিজে ভাল খাবার খান, বন্ধুদের খাইয়ে সুনাম কিনুন।

      বুয়াদের দিকে তাকিয়ে থাকার দিন শেষ করে ফেলুন। প্রবাসে গেলে বুয়া পাবেন কোথায়? হা হা হা…

      তা কেমন হল খিচুড়ি? রান্না যেহেতু অভিজ্ঞতার ব্যাপার তাই প্রথম বারেই ভাল হবে এমন নয়, ২য় বারে ভাল ও সুস্বাদু হবেই।

      রান্না করেন জেনে ভাল লাগল।

      শুভেচ্ছা। (সময়াভাবে উত্তর দেরীতে দিলাম বলে সরি)

      Like

  7. Bro i live in manila, i never cooked in Bangladesh before, but now i have to cook my food, good news is i am cooking and all credit goes to u, Ur recipes are very easy and well narrated, God bless you.

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ ভাই/বোন।
      আপনার কমেন্ট পড়ে চোখে পানি এসে গেল। হ্যাঁ, আমি এর জন্যই রেসিপি লিখা শুরু করি। আমি নিজেও এক সময়ে প্রবাসী ছিলাম, রান্না না জানার জন্য কতদিন না খেয়ে বা আবোল তাবোল খেয়ে থেকেছি তার কথা মনে হলে এখনো কষ্ট লাগে। সেদিন যদি এমন কোন বাংলা রান্নার ব্লগ পেতাম!

      আমি আমার সেই ভাবনা থেকেই এই ধরনের রেসিপি লিখার চেষ্টা করে আসছি। আমার মুল টার্গেট হল প্রবাসী, ব্যচেলর এবং রান্নায় আগ্রহী ভাই বোন।

      এখন মন পড়ে আমি যখন এই ধরনের রেসিপি লিখতে শুরু করি, তখে নেটে বা অনলাইনে অনেকে এই ধরনের খাবারের ছবি দিতেও সাহস পেত না। আমাদের সাধারণ খাবার গুলো অনেক তুচ্ছ তাছিল্যে ছিল অনেক। এখন অনেকেই আমাদের সাধারণ খাবারের ছবি তুলে দিচ্ছেন, এটা দেখে ভাল লাগে।

      আমাদের খাবার আমাদেরই। আমাদের আমাদের খাবার বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  8. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

  9. আজ আমি বানাবো।।।দেখি পারি কিনা

    Liked by 1 person

  10. ছবি দেখা যাচ্ছে না।

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]