কাঁচা মরিচকেও এক প্রকারের শাক বা তরকারী বলা যেতে পারে, তা আমি জানতে পারতাম না যদি না আমাদের পাশের বাসায় এমন তরকারী রান্না হত! আমাদের পাশের বাসায় এক পরিবার থাকেন যাদের গ্রামের বাড়ী বরিশাল জেলায়। এবং উক্ত পরিবারের ভাবীর কাছ থেকেই আমার ব্যাটারী জেনেছেন যে, বরিশাল অঞ্চলে কাঁচা মরিচকে তরকারী হিসাবেও রান্না করা হয়।
গত কয়েকদিন আগে এমনি আমাদের কথা হয়েছিল এবং সাথে সাথে আমরাও এই রান্নাটা করে ফেলি, তবে রান্নার রেসিপিটা উক্ত ভাবী থেকে জেনে নেয়া হয়েছিল। কাঁচা মরিচ ভুনা! তবে বরিশালে নাকি মরিচ ক্ষেত থেকে কচি (সদ্য ফুল খসে পড়া) মরিচ দিয়ে এই রান্না হয়ে থাকে, আমরা শহরে বসে সেই মরিচ পাবো কোথায়? তবে শহরে ইদানিং বেশ বড় বড় মরিচ পাওয়া যাচ্ছে, ঝাল অপেক্ষাকৃত বেশ কম, হাইব্রিড মনে হয়। আমরা সেই মরিচ দিয়েই রান্না করে খেয়ে দেখলাম। আহ…।। সাহসের তুলনা নাই। আমাদেরও সাহস আছে, আপনিও একবার দেখতে পারেন।
অপ্রাসঙ্গিক হলেও বরিশাল নিয়ে কিছু কথা বলে যাই। বরিশাল হচ্ছে বাংলাদেশের এমন এক জেলার নাম যেখানে আমাদের দেশের প্রচুর সাহসী মানুষের বসবাস। বাংলাদেশের গার্মেন্টসে যদি বরিশালের ছেলে মেয়েরা কাজ না করত তবে এই শিল্প দেশে টিকেই থাকতে পারত না! বরিশাল অঞ্চলের মেয়েরা গার্মেন্টস টিকিয়ে রেখেছে বলে আমি মনে করি। আমার সালাম থাকল তাদের জন্য। আর এই সাহসী মানুষ গুলোর কাছে কাঁচা মরিচ ভুনা তো নস্যি মাত্র হবেই।
উপকরণ ও প্রনালীঃ
ধাপ ১ – কাঁচা মরিচ রান্নার জন্য তৈরী করা।
কাঁচা মরিচকে ফালিফালি করে কেটে যে কোন ছেচুনি দিয়ে চেঁচে নিন।
সামান্য লবন যোগে ভাপিয়ে নিন।
কিংবা কম সিদ্ব করে পানি ঝরিয়ে নিন।
ধাপ ২ – মুল রান্না, সাধারন রান্নার মতই।
কড়াইতে তেল গরম করে সামান্য লবন যোগে পেঁয়াজ কুঁচি ভাজুন। তার পর এক টেবিল চামচ রসুন বাটা এবং হাফ চা চামচ হলুদ এর সাথে সামান্য পানি দিয়ে ভাল করে কষিয়ে ঝোল বানিয়ে ফেলুন।
ঝোলে তেল উঠে গেলে তাতে কিছু চিংড়ি মাছ দিন। (মাছ না থাকলে নাই, মাছ ছাড়াও নাকি এই রান্না চলে, তবে ছোট চিংড়ি দিয়েই নাকি এই রান্না বেশি হয়, ছোট চিংড়ি পরিমানে বেশী দিতে হয়)
ভাল করে আবারো কষিয়ে নিয়ে মরিচ দিয়ে দিতে হবে।
ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে।
হাফ কাপ পানি দিয়ে মিনিট পনর ঢাকনা দিয়ে মাধ্যম আঁচে রাখুন।
ঝোল কেমন রাখবেন তা আপনি নিজে সিদ্বান্ত নিন। এই ফাঁকে ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন, না লাগলে ‘ওকে’ বলুন।
ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।
খেতে প্রথমে আমার ভয় লাগলেও যখন গরম ভাতের সাথে সাহস করে মেখে নিলাম, আহ! কি যে বলব! আসলে বলার কিছুই নাই! এতদিন এমন মজার তরকারী মিস করলাম! আহ, এটা কি করে হয়। মনে হচ্ছিলো যেন কোন মজার শাক খাচ্ছি!
ইচ্ছা আছে আগামীতে কোথায়ো সুযোগ পেলে মরিচ ক্ষেতের ‘কচি মরিচ’ দিয়ে আবারো খাব। আপনারা যারা এখনো এই মরিচ ভুনা এখনো খান নাই, তাদের প্রতি অনুরোধ, বেঁচে থাকতে একবার ট্রাই করুন। বরিশালের এই খাবার আপনি মিস করতে পারেন না! কারন রান্নার সকল উপাদান আপনার হাতের কাছেই আছে, শুধু সাহস করলেই হল! আর সাহসের জয় সবসময়!
শুভেচ্ছা সবাইকে, ভাল থাকুন।
কৃতজ্ঞতাঃ পাশের বাসার ভাবী (নামটা জেনে নিতে হবে)
এই রান্না নিয়ে গতকাল রাতে দিলু রোড়ে আমার এক বন্ধুর সাথে আড্ডার ফাঁকে কথা হচ্ছিলো। আমি খুব অবাক হলাম, সে জানালো সেও এই রান্না খেয়েছে (তার বাড়ী বরিশাল নয়)! তার স্ত্রী নাকি মাঝে মাঝে বছরে দুই একবার এই রান্না করেন।
LikeLike
jhaal hobe nah..? Darun ranna toh–bhabtei parchi na! Chesta korb, aboshyoi! dhanyabad
LikeLike
ধন্যবাদ পাঞ্চালী ভাই। ঝালের ব্যাপারে আমিও ভয়ে ছিলাম, রান্না শেষে আমার সেই ভয় কেটে যায়। আর খেতে বসে তো, মনে হয়েছিল কোন সবজি দিয়ে ভাত খাচ্ছি। হা হা হা…
একবার রান্না করে দেখতে পারেন। শুভেচ্ছা।
LikeLike
না আমি এত টা সাহস দেখাতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।
LikeLike
হা হা হা……। আসলে সাহসের মার নাই।
ধন্যবাদ বোন।
LikeLike
nah hobe na! voy palem!
LikeLike
ধন্যবাদ সিদ হোসেন ভায়া। ভয় পেলে কি দুনিয়া চলে? হা হা হা…
শুভেচ্ছা।
LikeLike
দুর্দান্ত মজার রেসিপি। আপনার বাসায় এসে একবার খেয়ে যেতে হবে মরিচ ভর্তা।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন। কেমন আছেন? ঢাকায় আসলে চলে আসেন। তবে আপনি বেশ ভাল রান্না করেন বলেই জানি। এই রান্না করে অবশ্যই পরিবারের সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবেন, দেখি কে কি বলেন! হা হা হা…
শুভেচ্ছা।
LikeLike
bap re bap!!shahosh nai!!!annak jal hobe mona hoi!!tai na?
LikeLike
ধন্যবাদ কুয়াশা ব্রাদার। হা হা হা, আমিও তেমন ভেবেছিলাম, শেষ দেখি তেমন ঝাল হয় নাই! শাকশব্জি যাকে বলে…।
ভয়ের কিছু নাই…
LikeLike
darun! amr besh pochhondo hoechhe…
LikeLike
তা হলে একদিন রান্না করে সাহস দেখিয়ে ফেলুন। দেখি সাহস কত!
হা হা হা… শুভেচ্ছা নিন বোন।
LikeLike
উদরাজি ভাই
এক্সসেপশনাল একটা রান্না। আমি নিজেও কিছু এক্সপেরিমেন্ট করি মাঝে মাঝে, এটা দেখে মনে হয়েছে করা যায় এবং ভালো ও লাগবে। ধন্যবাদ।
LikeLike
আরে আমাদের কবি বাবুল ভাই যে! কেমন আছেন? রান্না নিয়ে আপনার উৎসাহ আছে দেখে বেশ আনন্দিত হলাম।
হা, হা হা, কেন নয়! একদিন রান্না করে সাহস দেখিয়ে দিন। আপনার সাথের সবাই বুঝুক।
যাই হোক, মাঝে মাঝে এসে দেখে যাবেন। খুশি হব। শুভেচ্ছা।
LikeLike
আমার বাড়ি বরিশাল হলেও দেশী রান্না হিসেবে এমনটা জানতামনা। তবে মশলা হিসেবে ব্যাবহৃত বিভিন্ন আইটেমকে সরাসরি তরকারী হিসেবে ব্যাবহারের এক্সপেরিমেন্ট আছে যথেষ্ট।
এছাড়া খাদ্যদ্রব্যকেও মশলা হিসেবে ব্যাবহারের এক্সপেরিমেন্টও কম না। যেকোন সবজীর দেশী রান্নার স্বাদের জন্য সামান্য চিংড়িমাছ বাটা অথবা মশুরডাল বাটা মশলা হিসেবে ব্যাবহারের ট্রাই করে দেখতে পারেন।
LikeLike
ধন্যবাদ অভি ভাই। আসলে এই ব্যাপারটা আমারো জানা ছিল না। আমাদের পাশের বাসা থেকে আমিও প্রথম জেনেছি।
রান্নায় আপনার আগ্রহ আছে এটা আপনার কমেন্ট দেখে বুঝা যায়। আপনি কি রান্না জানেন। রান্না জানলে আমাদের শুভেচ্ছা নিন।
চিংড়ি বা মুশুরডাল বাটার কথা বলে আপনি জিবে জল এনে দিয়েছেন। আপনার ফর্মুলায় রান্না করলে স্বাদ হবেই বুঝা যাচ্ছে।
শুভেচ্ছা। মাঝে মাঝে আমাদের দেখে যাবেন।
LikeLike
Aj e ranna korbo basai fire 🙂
LikeLike
হা হা হা…। সাবধানে! কচি মরিচ খুঁজে নিবেন।
ধন্যবাদ অজ্ঞাত ভাই।
LikeLike
আমার বাড়ি বরিশাল।
এই অপরিপক্ক মরিচ দু ফালি করে পানিতে ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে বিচিগুলো প্রায় ফেলে দেয়া হয়। এর সাথে সমপরিমান নারকেল বাটা ও চিংড়ি দিতে হবে। মশলাঃ হলুদ, রসুন, লবন আর পিয়াজ। সব একসাথে মাখতে হবে। এবার তাওয়ার উপরে ৩ প্রস্ত কলা পাতা বিছাতে হবে। উপরের পাতায় হাল্কা তেল দিয়ে মাছ-মরিচ-নারকেলবাটা গোল করে ছড়িয়ে দিতে হবে। আবার কলা পাতা দিয়ে ঢেকে মাটির সরা দিয়ে ঢেকে চুলায় মাঝারি আচে চাপাতে হবে। আস্তে আস্তে কলাপাতা পুড়বে, মৌ মৌ গন্ধ ছড়াবে রান্না ঘর থেকে সারা বাড়ি। এবার উলটে দিতে হবে। কি ভাবে? না পারলে আমাকে ডাইকেন, উলটে দেব। কলাপাতা নারকেল চিংড়ি কাচামরিচ মিলেমিশে কি একাকার ঘ্রান। ট্রাই করে দেখতে পারেন।
LikeLike
Aajaira,purai faltu
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
একবার রান্না করে খেয়ে দেখুন। রান্না করার আগে শুনে এটা আমার কাছেও ফালতু বা খেতে পারবো না বলে মনে হয়েছিল। রান্নার পর খেয়ে দেখতে পেলাম, বেশ মজাদার।
বরিশালে এই রান্না অনেকেই করে থাকেন। আমি জানি বলেই জানালাম।
শুভেচ্ছা।
LikeLiked by 1 person
পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD
I love raw-chilli with my daal-bhat. Very often I eat raw-chilli with my dinner. I learned that the capsaicin in raw-chilli which gives chilli it’s spiciness, is very good for health just like taking a clove of raw-garlic is extremely good for the heart. Studies show that eating raw-chill regularly helps keep the heart healthy by lowering cholesterol, keep blood pressure in a healthy range, and allowing more blood to reach the heart. But I eat raw-chilli because I like the smell of it. Even I was scared to try this recipe because I thought it would be very hot. But i was curious how it will taste and smell. So I cooked it with big fat chillies by following your recipe, it turned out fantastic! Not “jhal” at all still had the nice smell! I think this part of the recipe where “কম সিদ্ব করে পানি ঝরিয়ে নিন।” washed away all the “jhal”. It was very tasty. Very different in taste. I am sure I’ll make it again. Green-chilli is now my new favourite vegetable! Thanks you for this recipe!
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ বোন।
অনেক দিন পর আবার আপনার কমেন্ট পেয়ে খুশি হলাম। মরিচের এই রেসিপি সত্যি মজাদার। আমরা এর পরেও আর একবার রান্না করেছিলাম। ভাল লেগেছিল। এখন এমন কচি মরিচ পাই না বলে রান্না করি না, আশা করি আবারো করবো।
কেমন আছেন? শুভেচ্ছা নিন।
LikeLike