গ্যালারি

রেসিপিঃ মোরগ খোবানী (অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীর ফর্মুলা)


শুক্রবার সকালে আমাদের ঘুম থেকে উঠতে দেরী হয়ে যায়।  প্রতিটা বাংলাদেশী পরিবার এই শুক্রবারে ভাল খাবার খেতে চায়। কারন শুক্রবার আমাদের সপ্তাহিক ছুটির দিন এবং বাসায় সবাই এইদিনে এক সাথে থাকে এবং দুপুরের খাবার একসাথে খাওয়া যায়। এটা আমাদের মধ্যবিত্তদের একটা সাধারন খুশি! আমরা সামান্যতেই খুশি থাকি।

আজ সকালে উঠেই আমি আমার বুলেটকে আমাদের প্রিয় রান্নামাতা অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীরের বই ধরিয়ে দিলাম। মোরগ দিয়ে একটা ভাল রান্না বের করে দে বাপ! আমার সামনে ও বসে পড়ল। কত কি দুষ্টামি করতে থাকল, কিন্তু অবশেষে একটা রান্না বের করেই ফেলল! বলল, বাবা এটা রান্না করতে পার।  আমাকে পড়ে শুনাল উপকরন ও প্রনালী। আমি শুনে গেলাম, হা ঘরে মাত্র একটা  আইটেম নাই এবং এই আইটেমটা আবার ইচ্ছা হলে দিন না হলে নাই মার্কা! আমি এই রান্নায় রাজী হয়ে গেলাম, নামটাও বেশ, মোরগ খোবানী (খোবানী মানে কি? আমি জানি না!)

আর দেরী কি, চলুন দেখে ফেলি। বেশ চমৎকার হাল্কা রান্না, সহজ ও সুন্দর। দেখে যেমন মন ভরেছে তেমনি খেয়ে আমরা সবাই মোহিত। আগেই ধন্যবাদ জানিয়ে দিচ্ছি আমাদের প্রিয় রান্নামাতা অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবিরকে, আপনি যেখানে থাকুন ভাল থাকুন। আপনার বইটা আমাদের জীবন সহজ করে দিচ্ছে। আজকের এই নারী দিবসে আপনাকে খুব মনে পড়ছে।

উপকরণঃ (পরিমাণটা আমি আমাদের রান্নার সাথে মিলিয়ে দিলাম)
– মোরগঃ ১টা দেশী (আমাদেরটা হাফকেজি বা তার সামান্য উপরে হতে পারে, আপনি চাইলে ফার্মের মোরগ ব্যবহার করতে পারেন)
– পেঁয়াজ কুঁচিঃ হাফ কাপ
– রসুন বাটাঃ ১ চা চামচ
– আদা বাটাঃ ১ টেবিল চামচ
– দারুচিনিঃ ২ সেমি, ২/৩ টুকরা
– এলাচিঃ ৩/৪ টা
– লবন পরিমান মত
– টমেটোঃ মাঝারি দুইটা
– তেলঃ হাফ কাপ
– পানি (আগে গরম করে রাখতে হবে) পরিমান মত

* আমরা কয়েকটা কাঁচা মরিচ আস্ত দিয়েছিলাম। ভাল করে লক্ষ করুন, এই রান্নায় কোন হলুদ ও মরিচ গুড়া নেই! এবং বাকী সব কিছুই আমাদের রান্নাঘরে থাকে।

(আলুবোখারা পনে এক কাপ এই উপকরনের সাথে দেয়া যেত। কিন্তু আমাদের কাছে আলু বোখারা ছিল না বলে দেয়া হয় নাই এবং এটা অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবির বলেছেন ইচ্ছা হলে দেয়ার জন্য। মানে এটা নিত্য উপকরন নয়, ইচ্ছা।)

প্রনালীঃ

কড়াইতে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুঁচি (পেঁয়াজ বাটা হলেও চলত) সামান্য লবন যোগে ভেঁজে হলদে করে তাতে রসুন এবং আদা বাটা দিন এবং ভাজুন।


ভাজার ফাঁকে দারুচিনি এবং এলাচ দিন। চুলা ছেড়ে যাবেন না!


টমেটো (চামড়া ছিলে) দিয়ে দিন এবং আবারো ভাঁজতে থাকুন।


তেল উঠে এবং টমেটো গলে গেলে মোরগের গোসত দিন। এবং কিছুক্ষন কষিয়ে নিয়ে এক কাপ পানি (গরম হলে ভাল) দিন।


এবার ঢাকনা দিয়ে মধ্যম আঁচে মোরগের গোসত নরম হতে যতক্ষন লাগে ততক্ষন আঁচ দিন।


মোটামুটি এমন অবস্থায় আসতে দেরী লাগবে না! সারা ঘরে একটা চমৎকার ঘ্রান ছড়িয়ে যাবে। গোসত নরম হলে আরো পানি দিতে পারেন, ব্যাপার না, আর আপনি কেমন ঝোল রাখবেন এটা আপনার উপর নির্ভর করবে।


এবার ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন না লাগলে ওকে বলুন। কয়েকটা গোটা কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন, যারা ঝাল পছন্দ করবে তারা ভেঙ্গে ডলে খাবে! হা হা হা…


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।


আপনাদের আমি বলে বুঝাতে পারব না, কেমন স্বাদ হয়েছিল। পোলাউয়ের সাথে এটা এতই মজাদার হয়েছিল যে! না, থাক, আমার আর কিছু বলার নাই। আপনারা এবার নিজে একটু রান্না করে দেখেন।

এত কম মশলায় আসলেই, এত চমৎকার, ভাবা যায় না! এটা বাংলাদেশীদের পক্ষেই সম্ভব।

কৃতজ্ঞতাঃ অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীর।

25 responses to “রেসিপিঃ মোরগ খোবানী (অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীর ফর্মুলা)

  1. নুরুল ইসলাম তালুকদার

    মরিচ গুড়া আর হলুদ গুড়া না দিয়েও এমন স্বাদের রান্না। আমার গিন্নীকে দেখাচ্ছি।

    Like

  2. রান্নামাতা শব্দটা খুব পছন্দ হইছে।

    Like

    • ধন্যবাদ সুজন ভায়া।
      আমরা যারা রান্না করি, আমাদের তাকে রান্নামাতা বলতেই হবে। আমি রেসিপি নিয়ে যত বই পড়েছি তাতে তার বইকেই আমি সেরা মনে করি। তবে আমার এখন আফসোস লাগে যে, আমি তার সাথে দেখা করতে পারি নাই। তিনি নিশ্চয় আমার এই রেসিপি সাইট দেখলে খুশি হতেন।

      আমাদের কাছে তার রান্নার সিডিও আছে, আমরা আগে রাতে দেখতাম। এখন স্ময় পাই না বলে দেখি না। এনটিভিতে তার রান্নার অনুষ্টান আমার মতে সেরা ছিল।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. এই রান্নাটা আমি করি। কিন্তু জানতাম না এটাকে খোবানী বলে।আমি স্বাদ বদলানোর জন্য মাঝে মাঝে মরিচ গুড়া আর হলুদ গুড়া ছাড়া মাংস রান্না করি। শুকনো মরিচ আর আদা,রসুন, কাঁচামরিচ পেষ্ট দেই।

    Like

  4. khub valo ranna.amar 1ta question chilo.golap paprita ki ar er use kise kise hoie janale khushi hobo.ar ami khub taratari banglai likhbo.tc

    Like

    • ধন্যবাদ বোন, গোলাপের পাপড়ি শুকিয়ে কেটে ছোট ছোট করে নানা বিধ রান্নায় ব্যবহার করা হয় (যদিও এই ব্যাপারে আমার জ্ঞানও কম)। এটা ইন্ডিয়াতে বেশী ব্যবহার করা হয়, রান্নায় একটা আলাদা ঘ্রান আনে বলে জানি।

      তবে আমাদের কাছে একটা পাপড়িকা আছে, যা হচ্ছে ক্যাপ্সিকাম শুকানো। এটা আমার ছোট বোন আমাদের জন্য ইতালী থেকে পাঠিয়েছে, আমরা এটা মাঝে মাঝে ব্যবহার করি। রান্নার রং ও স্বাদ কিছুটা বাড়ে।

      গোলাপ পাপড়িকা আপনি যে কোন রান্নায় ব্যবহার করে দেখতে পারেন।

      আরো জানলে জানাতে চেষ্টা করব।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  5. amar arekta question chilo,misti ator ki.ar er use o kise kise hoie.kothai kinte pawa jai…onek jalachhi tai na!sorry.

    Like

    • ধন্যবাদ ছোট বোন,

      মিষ্টি আতর নিয়েও আমি বেশী জানি না। এটা আমাদের বাবুর্চিরা নানা রান্নায় ব্যবহার করে থাকেন। রান্নার ঘ্রান বাড়াতে। সাধারনত বড় খাবার দাবারে এই মিষ্টি আতর ব্যবহার করা হয় বলে জানি।

      এটা পাওয়া যায় বড় বড় আড়ত মার্কা দোকানে। চট্রগ্রামের রিয়াজুদ্দিন বাজারের বড় মশলার দোকান গুলোতে এই ধরনের আইটেম বেশি পাওয়া যায় বলে জানি।

      ব্যাপার না, আমিও বেশ জানছি। চলুক।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  6. রেসিপি তো আছেই, কিন্তু ছবিগুলো এত জীবন্ত যে ঘ্রাণ পাচ্ছি যেন। এ সবই আপনার কৃতিত্ব, রান্নায় আপনি দিনকে দিন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন নিজেকেই। আর আমাদের মাঝে এই ছড়িয়ে দেবার মহত্ত্বকে শুধু ধন্যবাদ দিলে খাটোই করা হবে।

    সব সময়ের জন্য শুভকামনা প্রিয় সাহাদাত ভাই।

    Like

  7. ধণ্য বাদ এমন রেসিপির জন্য

    Like

  8. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

  9. Khubani/khobani hochchhe ‘apricot’ ; kind of aloo bokhara. Orange color and tok-misti taste. Kashmiri ra khub rannay use korey. 🙂

    Liked by 1 person

  10. অসাধারণ।। 🙂

    Liked by 1 person

  11. আজকে এটা রাননা কোরেছি, খুব মজা হোয়েছে । খুব সহোজে এত মোজার তরকারি হয়ে গেলো । এখন থেকে এটা রেগুলারলি হবে ।

    Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]