গ্যালারি

রেসিপিঃ ফুলকপি, আলু ও টমেটো রান্না (ড. মো. রওশন আলম ও কোলন ক্যান্সার)


ড. মো. রওশন আলম, যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন, নানান বিষয়ে লিখেন। তবে আমি অনলাইনের নানান পত্রপত্রিকায় উনার স্বাস্থ্য বিষয়ক নানান প্রবন্ধ পড়ে বেশ আনন্দ পাই। উনার লেখার ধাপ গুলো বুঝতে বেশ সহজ লাগে। বেশ কিছুদিন আগে আমি উনার “কোলন ক্যান্সার সম্পর্কে সজাগ থাকুন” লেখাটা বাংলাদেশ নিউজে পড়ে বেশ কিছু জানতে পারি। আপনারা হয়ত অনেকে জানেন যে, আমাদের দেশের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ এই কোলন ক্যান্সারে আকান্ত হয়েছিলেন এবং শেষটা আপনারা সবাই জানেন। আমরা এখন যে অবস্থায় দেশে বা বিদেশে বেঁচে আছি, আমাদের সবার এই কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি আছে। তবে আমরা চাইলে এবং আমাদের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস বদলে ফেললে আমরা এই ঝুঁকি থেকে বের হয়ে আসতে পারি। আজকের রেসিপির আগে চলুন কোলন ক্যান্সার প্রসঙ্গে ড. মো. রওশন আলম স্যারের লেখা থেকে কিছু জানি। পুরা লেখার লিঙ্ক এখানে – পড়তে চাইলে ক্লিক করুন। আমি ড. মো. রওশন আলম স্যারের অনুমতি নিয়ে কিছু অংশ এখানে তুলে দিলাম।

২. কোলন বা কোলোরেকটাল ক্যান্সার
কোলন ক্যান্সারটি শুরু হয় ব্রহদান্তে বা কোলনের উপরে বর্ণিত চারটি অংশের যেকোনো জায়গায় অথবা কোলনের শেষ প্রান্তে অবস্থিত রেক্টামে বা মলনালিতে। কোলন ক্যান্সারকে রেকটাল ক্যান্সারও বলা হয়ে থাকে যদি কি না ক্যান্সারটির উৎপত্তির স্থান মলনালিতে হয়। কোলন এবং রেকটাল দুটো ক্যান্সারেরই লক্ষণ বা উপসর্গগুলো প্রায় কাছাকাছি।

নানাবিধ কারণে শরীরের মধ্যে কোলন ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। এই ক্যান্সারটি শরীরের মধ্যে বসতি স্থাপনের জন্য ধীরে ধীরে অনেক সময় নিয়ে নেয়। এমনকি কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে। ক্যান্সার স্থায়ীভাবে বাসা বাধার অনেক আগে থেকেই কোলনের বা রেক্টামের সবচেয়ে ভিতরের লেয়ার বা আস্তরণে নন- ক্যান্সারাস (বিনাইন) পলিপ সৃষ্টি হতে থাকে। এই পলিপগুলো ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। তবে সব ধরনের পলিপই যে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয় তা নয়। কোন কোন ধরনের পলিপগুলো ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী তা পরীক্ষার মাধ্যমে পলিপের প্রকারভেদ জেনে খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়। যেমন, এডেনোম্যাটাস পলিপগুলো (এডেনোমাস) প্রি- ক্যান্সারাস এবং এগুলো ধীরে ধীরে অনেক সময়ের ব্যবধানে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়। আর এক ধরনের পলিপ আছে যার নাম হাইপারপ্লাসটিক এবং ইনফ্লামেটরি পলিপ্স যেগুলো সাধারণত প্রি- ক্যান্সারাস নয়। কিন্তু এখন ডাক্তাররা মনে করেন যে, হাইপারপ্লাসটিক পলিপ গুলোও প্রি- ক্যান্সারাসে পরিণত হতে পারে অথবা কোলনের এসেনডিং অংশের মধ্যে এডেনোমাস এবং ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও যারা দীর্ঘদিন ধরে আলসারের ক্ষতের কারনে মলাশয়ে প্রদাহ (আলসারেটিভ কোলাইটিস) এবং ক্রন’স রোগে আক্রান্ত থাকেন, তাঁদের কোলনে ডিসপ্লেসিয়া নামক এক ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয় যার ফলে মাইক্রোস্কোপের নিচে সেলগুলোর আকৃতি দেখতে মনে হয় অস্বাভাবিক ধরনের কিন্তু সেগুলো সত্যিকার অর্থে ক্যান্সার সেল নয়, তবে সময়ের ব্যবধানে এগুলো ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়।
আমেরিকাতে ক্যান্সার ঘটিত কারণে যত মানুষ মারা যায়- তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় লাং বা ফুসফুসের ক্যান্সারে এবং তার পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত হয় কোলন ক্যান্সারের কারণে (নারী এবং পুরুষ সম্মিলিতভাবে)। এখানে প্রতি ৯.৩ মিনিটে একজন বা বছরে প্রায় পঞ্চান্ন হাজার লোক কোলোরেকটাল ক্যান্সারে মারা যায়।

৩. কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকিসমূহ
যে যে কারণগুলো কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, সেগুলো যেমন :
• পুরুষ বা স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে কোলোরেকটাল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সমান থাকে। তবে দেখা যায় যে, স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে কোলন আর পুরুষের ক্ষেত্রে রেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিই বেশি থাকে।
• আপনার বয়স যদি পঞ্চাশ বা তার অধিক হয়।
• আপনি যদি রেড (লাল) মিট (গরু, খাসি ও মহিষের মাংস, মেষ বা ভেড়ার মাংস, কলিজা ইত্যাদি) বা প্রছেস মিট খেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রছেস মিট বলতে বোঝায় যেমন- বীফ জারকি, সসেজ, হট ডগ, সেন্ডউইচের ভিতরের মাংস, মাংসযুক্ত ফ্রজেন পিজা, মাংসযুক্ত ফ্রজেন খাদ্য বা ক্যানে থাকে এমন মাংসযুক্ত খাবার, জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টের সেন্ডউইচের মধ্যে যে মাংস ব্যবহার করা হয়, বাচ্চাদের জন্য রেডমিট যুক্ত খাবারগুলো ইত্যাদি।
• খুব বেশি চর্বি ও ক্যালরিযুক্ত এবং কম আঁশযুক্ত (লো ফাইবার) খাবারের অভ্যাস থাকলে
• আপনার শরীরের অন্য কোথাও যদি আগে থেকেই অন্য ক্যান্সার থেকে থাকে
• যদি কোলোরেকটাল পলিপ্স (এডেনোমাস) থেকে থাকে
• ক্রনস রোগ বা আলসারেটিভ কলাইটিস আগে থেকেই থেকে থাকে
• যদি পরিবারের কারো (পিতামাতা, ভাইবোন বা ছেলেমেয়ে) আগেই কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড থেকে থাকে
• মেয়েদের ক্ষেত্রে যদি ব্রেসট, ইউটেরিন বা ওভারিয়ান ক্যান্সার হওয়ার পূর্ব রেকর্ড থেকে থাকে
• ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০% বেশি ঝুঁকি থাকে
• খুব বেশি এলকোহল সেবন, অত্যধিক ধূমপান করা, ব্যায়াম না করা ও অত্যধিক ওজন বাড়ানো- শরীরের মধ্যে কোলোরেকটাল ক্যান্সার সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

স্যারের লেখা পড়লে আপনারা সব বুঝে যাবেন। আশা করি আপনারা লেখাটা পড়ে দেখবেন। তবে আমি মনে করি এই রোগের প্রধান কারন (এটা আমার ধারনা) খাদ্যাভ্যাস। আমরা ও আমাদের শিশুদের ছোট বেলা থেকেই যদি খাদ্যাভ্যাস শিক্ষা দিয়ে থাকি তা হলে এই রোগের ঝুঁকি থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারব। সহজ ও সাধারন কথা, আমাদের প্রতিদিনই শাক সবজি তরু তরকারী খেতে হবে।

ড. মো. রওশন আলম স্যার যদি আমার বাসায় দাওয়াত খেতে আসেন এবং আমি যদি ফুলকপি, আলু ও টমেটো দিয়ে একটা রান্না করে টেবিলে নিয়ে আসি, তিনি কি খুশি হবেন? চলুন কথা না বলে রান্না দেখে ফেলি। ফুলকপি, নুতন আলুর দিন শেষ হতে যাচ্ছে, যত পারেন খেয়ে নিন। চলুন আমাদের রান্নাঘরে।

উপকরণঃ
– ফুল কপি (পরিমান বুঝে নিন)
– নুতন আলু (দুই/তিনটে)
– টমেটো (দুই/তিনটা, মাঝারি)
– তেলাপিয়া মাছের মাথা (এটা স্বাদ বাড়াবে, আপনারা যে কোন মাছের টুকরা বা মাথা ব্যবহার করতে পারেন)
– হলুদ গুড়া (পনে এক চা চামচ)
– লাল মরিচ গুড়া (ঝাল বুঝে, হাফ কিংবা এক চা চামচ, ফুল কপিতে লাল মরিচ কম দেয়া ভাল, বেশি দিলে রং নষ্ট হয়ে পড়বে)
– রসুন বাটা বা কুচি (এক চা চামচ)
– আদা পেষ্ট বা বাটা (হাফ চা চামচ, অনেকে এটা দেন না, আমি দিতে চাই ঝোলকে আর স্বাদ করে তুলতে)
– দুইটা মাঝারী পেঁয়াজ কুচি
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ (ঝাল বুঝে)
– লবন (পরিমান মত)
– তেল ও পানি
– কিছু ধনিয়া পাতা কুচি

প্রনালীঃ

ফুলকপি ও আলু ধুয়ে কেটে নিন।


কড়াইতে তেল গরম করে লবন যোগে পেঁয়াজ কুঁচি ভেঁজে সামান্য পানি দিন এবং উল্লেখিত মশলাগুলো দিয়ে কষিয়ে ঝোল বানিয়ে নিন। (এই ঝোল চাইলে অন্য পোষ্ট থেকেও দেখে নিতে পারেন)


এবার মাছের মাথা বা দুইতিন টুকরা মাছ দিতে পারেন। মাছ ব্যবহার ছাড়াও রান্না করে ফেলা যাবে। মাছের কারনে ঝোল আরো সুস্বাদু হয়ে উঠে, সামান্য পুষ্টিগুণও বেড়ে যায়। এক কাপ পানি দিয়ে ঝোল বাড়িয়ে নিন।


মিনিট বিশেক ঢাকনা দিয়ে জ্বাল দিন। মাছ চাইলে ভেঙ্গে ফেলতে পারেন।


এবার ফুলকপি এবং আলু দিয়ে মিশিয়ে নিন। তরকারীতে ফুলকপি নাড়াতে হয় সাবধানে, যেন ভেঙ্গে না যায়।


আরো এক কাপ বা তার বেশী পানি দিয়ে ফুলকপি ডুবিয়ে দিন। হাল্কা আঁচে হতে থাকুক। আলু ও ফুলকপি সিদ্ব হয়ে যাবে।


ঝোল গা গা হয়ে এলে এবার টমেটো বিছিয়ে দিন। কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিতে পারেন। ফাইন্যাল লবন দেখুন, লাগলে দিন। এভাবে হাল্কা আঁচে আরো কিছু সময় রাখুন।


সব ঠিক দেখালে এবার ধনিয়া পাতা কুচি ছিটিয়ে দিন। চুলায় আর বেশী সময় রাখার দরকার নেই।


এই নিন, খাবার প্রস্তুত। যাদু নয় বাস্তব!


ব্যস, বসে পড়ুন।

শরীরে কোন রোগ হলে ভয়ের কোন কারন নেই। যে কোন রোগ যদি প্রাথমিক অবস্থায় থাকে এবং সনাক্ত করা যায়, তবে তা কিউর করা যায়। শরীরে যে কোন সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের কাছে যান এবং নিয়মিত ঔষধ সেবন করুন। বয়স চল্লিশ হয়ে গেলে আরো বেশী সর্তকতা নেয়া জরুরী। আপনি আপনার পরিবারের সম্পদ, এটা আপনাকেই বুঝতে হবে। আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে, আপনার প্রিয়জনদের জন্যই। এবং আপনাকে আরো আরো বেশী দিন বেঁচে থাকতে হবে আমাদের রেসিপি পাঠ করার জন্য! হা হা হা…

সবাইকে শুভেচ্ছা।

কৃতজ্ঞতাঃ ড. মো. রওশন আলম

7 responses to “রেসিপিঃ ফুলকপি, আলু ও টমেটো রান্না (ড. মো. রওশন আলম ও কোলন ক্যান্সার)

  1. দারুন পোস্ট! আমাদের সবাইকে সচেতন হতেই হবে।
    আমি ফুলকপি ভাজি, তরকারীতে আদা, রসুন দেই। ফুলকপি, বাধাকপির একটা বুনো গন্ধ হয়, বিশেষ করে সিজনের শেষের দিকে। আদা, রসুন দিলে সেই গন্ধটা থাকেনা আর স্বাদও বেড়ে যায়!

    Like

  2. ধন্যবাদ, আপনার লেখা কয়েকটি রেসিপি পড়েছি। ভাল লেগেছে। গুড জব।
    মোঃ রওশন আলম।

    Like

  3. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

সুরঞ্জনা এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল