গ্যালারি

রেসিপিঃ শোল মাছ এবং মটর শুঁটি (দুলাভাই শালা কম্বিনেশন)


শোল মাছ দিয়ে মটর শুঁটি রান্না, আমাদের দেশের পরিবার গুলোর একটা জনপ্রিয় রান্না। শোল মাছের সাথে মটর শুঁটির কম্বিনেশনে তরকারী রান্না করলে খেতে যে অত্যান্ত সুস্বাদু হয়, তা যিনি অবিস্কার করেছেন তাকে কাছে পেলে পা ছুঁয়ে সালাম করতাম। আপনারা যদি মাইন্ড না করেন তবে এই চমৎকার কম্বিনেশনকে ‘দুলাভাই শালা’র সাথে তুলনা করা যেতে চাই! আমি এই জীবনে যতবার এই রান্না খেয়েছি ততবারই আনন্দিত হয়েছি। আমার আম্মা এই কম্বিনেশনের রান্না করতেন শীতের সময়ে। কারন বড় শোল মাছ এবং মটর শুঁটি  দুটোই শীতের সময়ে পাওয়া যেত এবং এখনো তা হয়!

বছরে আমরাও এখন বেশ কয়েকবার এই রান্না করে থাকি। গত কয়েকদিন আগে একটা শোল মাছ কিনেছিলাম ‘স্বপ্ন’ থেকে। মাছটা কিনে রাতে রান্না করব ভেবে ছিলাম। এবং অভ্যাস মত সেদিন রাতে বাজার দেখতে গিয়ে দেখলাম, মাছ কিনে আমি বিরাট ধরা খেয়েছি! বাজারে প্রচুর শোল মাছ উঠেছে, দামও অনেক কম। স্বপ্ন আমাকে স্বপ্নই দেখালো! কমের পক্ষে এই মাছে একশত টাকা ঠকেছি!

শোল মাছের সাথে আমাদের রান্না টেষ্টার বুলেটের দুষ্টামী!

এদিকে মটর শুঁটির কেজি একশত টাকা (খোসা সহ), অনেক দামাদামি করে নব্বুই টাকা করে কিনেছিলাম! কোথায় যাই কি খাই, দেশে মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর কি অবস্থা কেহ কি খবর রাখে। সাধারন এই মটরশুঁটির দাম কি করে এত বেশি হয়। আমার মাথায় কিছুই ধরে না, এই দেশের কি হবে। আমাদের মত মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবিরা কি খাবে, কি করে সংসার চালাবে? আরো দুঃখ হচ্ছে খোসা ছড়িয়ে দেখলাম, ভিতরের মটর দানা খুব একটা ভাল সাইজের নয়! এত দুঃখ কোথায় রাখি!

চলুন রান্না দেখে ফেলি। হাতে বেশি সময় নেই। তবে এই রান্না কে কে খেয়েছেন, জানাতে ভুলবেন না।

উপকরনঃ
– শোল মাছের বড় কয়েক টুকরা (আমরা রাতে ৫ টুকরা নিয়ে রান্না করেছিলাম!)
– পেঁয়াজ কুঁচি – মাঝারী সাইজের দুটো
– আদা বাটা – এক চা চামচ
– রসুন বাটা – এক চা চামচ
– হাফ চামচ হলুদ গুড়া
– পরিমান মত লাল মরিচ গুড়া
– এক চিমটি জিরা গুড়া
– পরিমান মত লবন
– পরিমান মত তেল
–  ধনিয়া পাতার কুঁচি
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ (কুঁচি ও গোটা)

প্রনালীঃ

সামান্য লবন যোগে মটর শুঁটি গুলোকে ভাল করে সিদ্ব করে নিন। মটর দানা গুলো নরম হয়ে গেলে পানি ঝরিয়ে রাখুন।


গরম তেলে সামান্য লবন যোগে পেঁয়াজ কুঁচি ভেজে আদা, রসুন, মরিচ, হলুদ, জিরা দিয়ে কষিয়ে নিন এবং এক কাপ পানি দিয়ে দিন।


এক দুটা কাঁচা মরিচ দিয়ে ভাল করে ঝোল বানিয়ে নিন। মোটামুটি তেল উঠে যেতে দিন। মশলার ঘ্রান যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।


এবার মাছ গুলো (কেটে পরিস্কার করে রাখা) দিয়ে দিন। এবং আবারো কিছুক্ষন কষিয়ে নিন।


মাছ গুলো ডুবে যায় এমন করে পানি দিন।


এবার মটর শুঁটি গুলো দিয়ে দিন।


ব্যস মিনিট পনরর জন্য ঢাকনা দিয়ে আগুনের আঁচ বাড়িয়ে দিন। মাঝে মাঝে মাছ উলটা পালটা করতে দিয়ে পারেন। তবে মাছ যেন ভেঙ্গে না যায়। বড় খুন্তি দিয়ে নাড়ালে ভাল হবে।


এমন অবস্থায় এসে পড়বে। এবার ফাইন্যাল লবন দেখুন। ধনিয়া পাতার কুঁচি ও কাঁচা মরিচের কুঁচি ছিটিয়ে দিন। ঝোল ছোট চামচে তুলে ঠান্ডা করে ঝোলের স্বাদ দেখুন। লবন লাগলে দিন। আর ঝোল কেমন রাখবেন সেটা আপনি নির্ধারন করুন।


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।


বিশ্বাস করবেন কি না বুঝতে পারছি না। এতই মজাদার হয়েছিল যে, গরম ভাতের বারটা বাজিয়ে দিয়েছিলাম! তাজা মাছ এবং সব কিছু মিলিয়ে বেশ মজাদার রান্না হয়েছিল।

সবাইকে শুভেচ্ছা। খুবই সহজ রান্না, মশলাপাতি সব হাতের কাছেই, আশা করি সবাই পারবেন। একবার রান্না চেষ্টা করে দেখুন, কত আনন্দ। কত ভালবাসা! খুব সামান্য কিছু দিয়েই শুরু করে দিন, আজই! এখুনি!

13 responses to “রেসিপিঃ শোল মাছ এবং মটর শুঁটি (দুলাভাই শালা কম্বিনেশন)

  1. শালা-দুলাভাই! হাহাহা, হাসতে হাসতে শেষ!

    খুবই মজার রান্না, আমারো এটা খুব প্রিয়। শীতকালে এই তরকারীতে মাঝে মাঝে নতুন আলু আর শীতের টমেটো দেওয়া হতো, আর পেঁয়াজপাতা বা ধনেপাতা ছিটানো হতো নামানোর ঠিক আগে আগে। আহা, জিভে জল চলে এলো!

    Like

    • ধন্যবাদ রনি ভাই। আপনি হাসছেন যেনে খুশি হলাম। শুধু রান্না করলে চলে না, মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টার দরকার আছে। না হলে জীবন চলবে না। আমাদের রান্নায় হাসি তামাশা চলে। মাঝে মাঝে আমার ব্যাটারীকে এমন সব জোক (বাইরে শুনে যাওয়া) বলি যে, সে হাসতে হাসতে খিল তুলে ফেলে। স্ত্রীর সাথে ভাল মন্দ দুই ধরনের জোক করা যায়! পাঠক/পাঠিকার সাথে জোক করতেও হুশিয়ারে করতে হয়। আর বন্ধুদের সাথে, সব কিছুই চলে! আপনাকে আমি বন্ধু মানি। আপনার সাথে মজার জোক চলতে পারে। হা হা হা… শুনতে চাইলে বলেন!

      ধনে পাতা ও কাঁচা মরিচ কুঁচি দিয়েছিলাম তবে তা পরিমানে সামান্য ছিল বলে ছবিতে ভাল দেখা যাচ্ছে না। নতুন আলু, শীতের টমেটো, পেঁয়াজপাতা বা ধনেপাতা! আহ… কিন্তু তাহলে দুলাভাইয়ের সাথে অনেক শালা শালী হয়ে যেত! টমেটো নিশ্চয় শালীই হবে!

      শুভেচ্ছা নিন রনি ভাই। আপনাদের কমেন্ট আমাদের প্রচুর উৎসাহ যোগায়। আপনার পরিবারের সবার জন্য শুভেচ্ছা।

      Like

  2. I bye shole fish from Bangladeshi shop,frozen (6 month’s old)….when l cook it there is no test left 😦 ……when l see ur picture,l kind of test it too….thank’s vaia……. may ALLAH bless u….anjuman..

    Like

    • ধন্যবাদ বোন, বেশি দিন ফ্রীজে থাকলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় কথাটা আমি মনে প্রানে মানি। মাছ ফ্রীজ থেকে বের করে কমের পক্ষে ৩ ঘন্টা নরমাল পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। নরম/ সফট হয়ে গেলে রান্না করুন, তাতে কিছুটা যদি স্বাদ আসে। তবে তাজা কিছু রান্না করা এবং তার সেয়াদ নেয়া চরম ব্যাপার।

      আপনার কমেন্ট গুলো আমরা বেশ উপভোগ করছি। আপনিও পরিবার নিয়ে ভাল থাকুন।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. মটরশুটি আর শোলমাছ যদি দুলাভাই ও শালা হয়ে থাকে তবে শোলমাছ আর মুলা ভাজির কম্বিনেশনটা হবে দুলাভাই শালী। হা হা হা! দারুন রান্না! ছোটবেলায় আম্মা এমন রান্না করতেন। শিং মাগুর দিয়ে মটরশুটি, টোম্যেটো, নতুন আলু দিয়েও দারুন লাগে। সিলেটে আগে মটরশুটি পাওয়াই যেতোনা। এখন অবশ্য মাঝে মধ্যে পাই। তখন বেশী করে কিনে শুটি ছাড়িয়ে ডীপ ফ্রীজে রেখে দেই। আমার কন্যার খুবই প্রিয়। তবে কুম্ভকর্ণ খান না।
    মটরশুটি, ফুলকপি, আলু দিয়ে রুই, কাতলা সঙ্গে ডাল বা কুমড়ো বড়ি… উফ! দারুন!

    Like

    • প্রিয় রান্নাতো আপা, কমেন্টে যে সব খাবারের নাম নিলে যে, জিবে জল এনে দিয়েছেন। বিশেষ করে “শিং মাগুর দিয়ে মটরশুটি, টোম্যেটো, নতুন আলু”। আহ…।।

      আমি এই রেসিপি গুলো সামনে নিয়ে আসছি। দাঁড়ান, সময় পেলেই রান্না করে ফেলবো।

      শীতের এই সবজি গুলোরে তুলনা হয় না। তবে মটর দানা ভাল করে মজিয়ে নিতে হবে না হলে পেটে সইবে না! হা হা হ, কুম্ভভাই কেন এত ভাল খাবার খান না! একটা বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে দেখছি!

      শুভেচ্ছা।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  4. পিংব্যাকঃ রেসিপিঃ শোল এবং পেঁপে রান্না (ছবি ব্লগ, দেখেই বুঝা যায়) | রান্নাঘর (গল্প ও রান্না)

  5. Ami Bharote thaki, rannar blog dekhte giye apnar Solmach-pepe-matarsunti rannar chobi dekhe ami solmach ante chollam. kheye apnake janabo. subhechha.

    Like

    • হা হা হা…।। ধন্যবাদ। আপনার কমেন্ট পড়ে ধন্য মনে হচ্ছে। দেখে আপনার ইচ্ছা হয়েছে এটাই আমাদের আনন্দ দিলো। আপনি রান্না ভাল জানেন বলে মনে হচ্ছে। রান্না না জানলে এত সহজেই আপনি শোল কিনতে যেতেন না! হা হা হা… আপনার সাফল্য কামনা করছি। আশা করি আপনার সাথে যারা আছেন, তারা আপনার রান্না খেয়ে তারিফ করবে।

      কাউকে কিছু রান্না খাওয়ানোর চেয়ে এই দুনিয়াতে আর কোন আনন্দ নাই। এই ভালবাসার তুলনা হয় না।

      শুভেচ্ছা। আশা করি আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের জানাবেন।

      Like

  6. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

  7. বুলেট তো খুব cute

    Like

সাহাদাত উদরাজী এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল