মাছ বাজারে গেলে নুতন কোন মাছ চোখে পড়লে আমি কিনতে চেষ্টা করি। মাছ দোকানীরা আমাকে বেশ ভাল করেই চিনে গেছে! কারন প্রতি রাতে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে আমি মাছ বাজারে একটা ঢু মেরেই যাই। মাছ কিনি আর না কিনি দেখতে তো বাধা নেই! গতরাতে বিরাট বিরাট গজার মাছ দেখেছিলাম, এক একটার ওজন তিন কেজি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছিলো! দাম কেজি হাঁকিয়েছিল ৪৫০ টাকা করে। তবে আমি মুলামুলি করি নাই, হয়ত ৪০০ টাকা কেজি রাজি হত। তবে এই সাইজের শোল মাছ হলে কিনেই ফেলতাম! হা হা হা… আমরা ছোট বেলায় (নিজে কিনে খেতে পারি নাই!) অনেক বড় গজার, শোল, টাকি মাছ খেয়েছি। আমার এখনো মনে পড়ে, সেই সময়ের কথা। বিশেষ করে শীতের শেষে বেশ বড় গজার, শোল, টাকি, মাগুর, শিং, কৈ মাছ ধরা হত। আমারা গ্রামের বাড়ী বেড়াতে গেলে, আমাদের বাড়ীর পুকুর গুলো পানি সেচা হত। আরো কত কি! সেই দিন কি আর আছে! যাই হোক বড় মাছের স্বাদই আলাদা। আমাদের ছেলে মেয়েদের কাছে এই সব গল্পই!
সামুদ্রিক মাছ আমার কাছে ভাল লাগে এবং মাছ ব্যাপারি কে মাছের নাম জিজ্ঞেস করতেই বলল, এটা সুরমা মাছ। যাই হোক, ঠিক এমন বড় সুরমা মাছ আমি আগেও কিনেছি এবং নানান পদের রান্না করে খেয়েছি। রেসিপি আছে। হিসাব কষে চারটে মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম! রাতে মাছ হাতে বাসায় ফিরা আমার জন্য নুতন কিছু নয়! তবে এই মাছ দেখে আমার ব্যাটারী জানালেন।
; কি যে কর!
হেসে বললাম, আমি করব না তো কে করবে?
; বেয়াদপি কথা বলবে না, ভাল হবে না!
আমি আর কথা বাড়াই নাই! হা হা হা… এখন রাগিয়ে দিলে রাতে খবর করে দিবে! যাই হোক, তিনি আমার মুখ দেখে হেসে দিলেন। আমি বললাম, এই মাছ চারটে শুধু কয়েক পদের সস দিয়ে ভাঁজা হবে। হেল্প করতে চাইলে আসতে পার। সামান্য রেষ্ট নিয়ে, আমি রান্নাঘরের দিকে চললাম। তিনি আর থাকতে পারলেন না! হা হা হা…
; তোমাকে রান্না শিখিয়ে বিরাট ভেজাল করে ফেলছি!
আমরা দুইজনে কাজে লেগে গেলাম। ফাঁকে ফাঁকে চলছিলো আমাদের স্বাভাবিক আলাপ, আলোচনা।
; তোমার সুরমা মাছের চামড়া ঠিক তোমার মত! বেশ শক্ত এবং মোটা।
তা না হলে কি আর ওরা সমুদ্রে বসবাস করতে পারত! আমি হেসে বললাম। সমুদ্রে বসবাসে নানান যোগত্যা থাকতে হয়। এত কিছুর ভিড়ে ওরা টিকে থেকে ঢাকায় আসতে পেরেছে!
; তোমার সাথে কথায় পারব না! তা জনাব, পুরা মাছ গোটাই ভাজি করবেন?
হা, আজ একটু ভিন্ন ভাবে ভাজি হবে। শুধু কয়েক পদের সস দিয়ে। চামড়া যেহেতু মোটা তাই পোড়া পোড়া হবে, খাবারের সময় চামড়া ফেলে দেবে প্রয়োজনে।
; স্বাদ না হলে খবর আছে!
আমি বললাম, আমার উপর বিশ্বাস রাখ। আমার হাতের ছোঁয়ায় রান্না এখন শিল্প! (আমি তাকে রাগিয়ে দেয়ার জন্য এমন প্রায়ই বলে থাকি। আগে রাগ করলেও এখন তিনি বুঝেন আমি মজা করি।)
এদিকে আমার ছেলে এসে আমাদের আড্ডায় যোগ দেয়। এখন তেমন পড়া শুনা নেই, অলস সময় কাটছে তার। টিভি, গেইম আর খেলাধুলায় বেশ আনন্দে আছে।
– নেট রেসিপি বাবা, কি রান্না করছেন? (ওর মায়ের মত ঢং করে)
কেমন লাগে বলেন! আমি আবার ‘নেট রেসিপি বাবা’ হলাম কবে? আসলে ও মাঝে মাঝে এমন সব শব্দ ব্যবহার করে যে, এমন অঙ্গভংগী করে, হাসতে হাসতে দম বের হয়! তবুও আমি কিছুটা সিরিয়াস হলাম, কেন আমি কি এখনো খারাপ রান্না করি? আমার রান্না কি মুখে দেয়া যায় না!
– না, আজকাল তুমি বেশ ভাল রান্না কর বটে! তবে রান্নাঘরে একা থাকতে পার না, এই আর কি!
এতটুকুন ছেলে কি বলে দেখেন? আসলে রান্নাঘরে সে আমাদের একটা ভাল সময় কাটে এটা সে বুঝে গেছে!
যাই হোক, আরো অনেক কথা, অনেক আড্ডা হয়েছে। আগামীতে বলা যাবে। আমাদের মাছ ভাজি শুরু করা যেতে পারে। চলুন দেখে ফেলি।
প্রনালীঃ
ভাল করে পরিস্কার করে লবন পানিতে ধুয়ে নেয়া হল।
কয়েক পদের সস পরিমান মত বুঝে (টমেটো সস, ফিস সস, এবং সয়া সস) এবং হাফ চামচ হলুদ গুড়া নেয়া হল। সসে লবন থাকে বলে সামান্য লবন দেয়া হল।
ভাল করে মাখিয়ে আধা ঘন্টার জন্য রেখে দেয়া হল, ম্যারিউনেটেড। (এই সময় অন্যান্য খাবার গরম এবং ধোয়া মোছার কাজ গুলো সারিয়ে নেয়া যেতে পারে)
চওড়া তাওয়ায় তেল গরম করে মাছ গুলো ভাঁজা হচ্ছে।
ঢাকনা দিয়ে ডেকে অল্প আঁচে ভাজি করতে হবে। যেহেতু চামড়া শক্ত তাই সময় দিতে হবে। মাঝে মাঝে ওলট পালট করে দিতে হবে। মাছ ভাঁজিতে যদি, মাছের চামড়া লেগে যায় তবে চুলা বন্ধ করে অপেক্ষা করুন, ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনা আপনি উঠে যাবে। এবং যে কোন মাছ ভাঁজিতে চুলা থেকে নিরাপদ দুরত্বে থাকুন।
কেমন ভাজি চান এটা আপনি নির্ধারন করুন। তবে মাছের ভিতর নরম হল কি না তা দেখে নিতে হবে।
এবার জমা করে ফেলার সময়।
ব্যস হয়ে গেল সুরমা ফিস ফ্রাই।
স্বাদের কথা কি বলবো। আমার রান্না টেষ্টার বলছিলো, “বাবা, আউটস্ট্যান্ডিং! জাক্কাস। দশে দশ। মাছে তেমন কাটা নেই, সেজন্য তোমাকে আরো এক নাম্বার বেশি দেয়া যায়।” (আজকাল সবাই দেখি বিচারক হয়ে গেল!)
মাঝে মাঝে আপনারাও এমন মাছ ভাজি করে দেখতে পারেন। আশা করি ভাল লাগবে। শুভেচ্ছা।
কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন
দেখতে তো চমৎকার! বলছেন যখন, বুঝে নিলাম খেতেও তেমনই হয়েছে। চারটা সুরমা মাছের ওজন কত? আর দাম?
LikeLike
ধন্যবাদ হুদা ভাই। রাত বেশী হওয়াতে হয়ত দাম কম ছিল! কেজি ২০০ করে চাইছিল, অবশেষে ১৮০ করে কেজি রাজি হয়েছিল। চারটে মাচ ৬০০ গ্রামের মত হয়েছিল। তবে আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা রেখেছিল, মুল দাম ১০৮টাকা। আমাকে চিনে বলে আর ভাংতি টাকার দিকে যায় নাই।
মজার ব্যাপার, আমি যখন পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, এক তরুণ (তাকে ঢাকা শহরের মেসে থাকা মনে হয়েছিল, মোবাইলে কথায় সেটা আরো স্পষ্ট হয়েছিল) দুই কেজি কিনেছিল। মাছ কিনেই সে তার বন্ধুদের বাসায় আমন্ত্রন জানাছিলো। হয়ত রাতে এই মাছ দিয়ে পার্টি করবে!
এই মাছ পুড়িয়ে খেতে বেশ ভাল লাগবে নিঃসন্দেহে। সাথে যদি থাকে কঠিন পানীয়!
শুভেচ্ছা।
LikeLike
কঠিন পানীয় যোগাড় হলেই এই মাছ কিনে ফেলবো কয়েক কেজি। এর পরে ……
LikeLike
হা হা হা… ইউ আর রিয়েলি জোকিং!
হুদা ভাই, কি যে বলেন!
LikeLike
সুরমা মাছ আমার বড় ভাইয়ের খুব প্রিয়। ভাইয়ের বাসায় গেলে খাওযা হয়। উনি মাঝে মাঝে ঢাউস সাইজের সুরমা মাছ কেনেন। তবে ভাজা সুরমা খাওয়া হয়নি।
LikeLike
ধন্যবাদ বোন। কেমন আছেন? অনেকদিন পর দেখা।
অনেক ধরনের মাছ অনেকে খেতে চান না বলেই পরিবারের কর্তা (বাজার করার লোক) তা কিনেন না। আমরা মোটামুটি সর্বভুক! যা পাই তা খাই! সুরমা মাছ আরো বেশ কয়েকবার খেয়েছি এবং তা বড় বড় ছিল। আপনার ব্রাদারকে শুভেচ্ছা।
তা দুলাভাই কি কি মাছ কেনেন বা খেতে পছন্দ করেন।
LikeLike
আজ মাসিক বাজার করতে বের হবার পথে মেয়ে জোর করে স্বপ্নের নতুন শাখায় নিয়ে গিয়েছিলো। ওখানে প্রচুর সামুদ্রিক মাছের ছড়াছড়ি দেখলাম। সুরমাও চোখে পড়লো। সাইজে অনেক বড়, দামেও তেমনি। আমি ১কেজি বড় সরপুটি কিনে খান্ত দিলাম। এখানকার মাছ বাজারে কয়েকদিন গিয়েছি, স্বভাবতই পরিবেশের কারনে আর যাওয়া হয়না। বাসায় মাছুয়ালারাই ভরসা। আমার বাজে অভ্যাসের কারনে নিজে ছাড়া অন্য কারো করা বাজারই পছন্দ হয়না। সে কারনে অনেক সময় মাছ না থাকলে ভর্তা ভাজি, ডিম দিয়েই চালাই। ঘরে বাচ্চারা থাকলে অবশ্য অসুবিধা হতো।
বড় বড় সরপুটি এমন করে সস দিয়ে ভাজবো ইনশাল্লাহ!
আমার রান্নার পোস্টে কোনো কমেন্টই করলেন না। তাহলে আর পিঠার পোস্ট দিয়ে কি হবে? 😦
LikeLike
ধন্যবাদ বোন।
আপনার রান্নার পোষ্টে আমি কমেন্ট করেছি। কিন্তু আপনি দেখছি কমেন্ট মডারেশন দিয়ে রেখেছেন। আপনি আপনার ব্লগে গিয়ে ড্যাশবোর্ডে কমেন্ট অফশনে গিয়ে আমার কমেন্ট অনুমোদন করে দিন। তা হলে আমার কমেন্ট দেখা যাবে।
কমেন্ট করি বা না করি আমি দেখি, অনেক সময় মোবাইল থেকে দেখি বলে কমেন্ট করা হয় না।
পিঠার পোষ্ট না দিলে হরতালের ডাক দিয়ে দিব!
LikeLike
কদিন আগে আপনার কোরাল কাবাব (ইরাকী স্টাইল) দিয়ে ঘরোয়া পাটি মাত করেছি, আশা করি শিঘ্রই সুরমা ফিস ফ্রাই ট্রাই করবো।
শাহাদত ভাই একটা রিকোয়েষ্ট – পাঙ্গাস মাছ আমার খুব পছন্দের মাছ কিন্তু আমার ‘ব্যাটারী’ পাঙ্গাস মাছ রান্না করতে গেলে ডাউন হয়ে যায় হা-হা-হা ।
দয়া করে পাঙ্গাসের খুব ভালো একটা রেসিপি দেন আমার ‘ব্যাটারী’কে খাইয়ে চার্জ করতে চাই। যাতে পাঙ্গাসের কথা শুনলে ডাউন না হয়ে যায় –
LikeLike
ধন্যবাদ সরোয়ার ভাই, কোরাল কাবাব (ইরাকী স্টাইল) আসলে একটা মজাদার রেসিপি ছিল। আমি এই রান্নাটা টিভিতে দেখেছিলাম এবং সামান্য পরিবর্তন করে রান্না করেছিলাম। আমার কাছেও বেশ মজাদার লেগেছিল। আমার বুলেট, ব্যাটারী সেটা বেশ আনন্দ করে খেয়েছিল।
আপনি রান্না করেন জেনে অত্যন্ত ভাল লাগল। রান্না করা গৌরবের ব্যাপার বলে আমি মনে করি। এবং পিতার রান্না খেয়ে যখন পুত্র/মেয়ে, মা/বাবা, স্ত্রী আনন্দিত হন তখন আর কি বলার আছে। আমি জানি, যে সব স্বামীরা স্ত্রীকে রান্নায় সাহায্য করেন (রান্নাঘরে নানান কাজে হেল্প করেন), তাদের স্ত্রীরা তাদের আরো বেশী ভালবাসে। হা হা হা… সংসারে ঝগড়াঝাটিও কম হয়। স্ত্রীরা নিঃসন্দেহে খুশী হন, তাদেরো আড্ডা দিয়ে সময় কাটে, মনের কথা বলতে পারেন।
পাঙ্গাস মাছ নিয়ে পরবর্তি কমেন্ট দেখুন।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
আপনার দেওয়া কোরাল কাবাব বানিয়ে আমার ব্যাটারীর চক্ষু চড়কগাছ করে দিয়েছি। ভাই পাঙ্গাস আমার খুব পছন্দের মাছ কিন্তু আমার ব্যাটারী পাঙ্গাস রাধতে গেলে ডাউন হয়ে যায়। এমন রেসিপি দেন যেন রাধলে চার্জ হয়ে যায়।
LikeLike
ধন্যবাদ সরোয়ার ভাই,
পাঙ্গাশ মাছ একটা ভাল সুস্বাদু মাছ হলেও কেন জানি এই মাছটা নানান বদনাম মাথায় নয়ে ঘুরছে! হা হা হা।। আজে বাজে খাবার খায়, যে কোন ময়লা নর্দমায় বেঁচে থাকে বলে অনেকে এই মাছ খেতে চান না। কিছু বাজে লোক এই মাছের চাষে নানান প্রকার অনিয়ম করায় এই মাছ এখন অনেকে দেখতে পারেন না। খেতে বসলে সেই সব কথা চোখের সামনে ভেসে উঠে বলে অনেকে খেতে চান না!
আমিও এই পাঙ্গাশ মাছ ভাল পাই। তবে দশা আপনার মতই। আমার ব্যাটারীও আগে পছন্দ করলেও এখন পছন্দ করেন না। তবুও আমি নদীর পাঙ্গাশ পেলে কিনে ফেলি (বুঝার উপায় নাই, মাছ বিক্রেতার উপর ভরসা করে)। পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে একটু বেশী কষিয়ে রান্না করলে পাঙ্গাশের জুড়ি নেই। যাই হোক, আমি পাঙ্গাশের রেসিপি নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম, পোষ্ট আকারে দেয়া যায় কি না? আপনি সেই পথে আমাকে এগিয়ে দিলেন। পাঙ্গাশ নিয়ে কিছু রেসিপি নিয়ে আসবো ভাবছি এখন।
আশা করি সাথে থাকবেন এবং মাঝে মাঝে দেখে যাবেন। আপনার পরিবারের সবার জন্য শুভেচ্ছা।
সাথে আছি, সাথে থাকুন।
LikeLike
Assalamu alikum, armra aponer page er natun fan, thanks atto sundor sundor receipe deoar jonno. vai ei receipe er kono image show hoi na, aktu jodi check kore diten khushi hotam. thanks
LikeLike
পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD