একটা চরম সত্য কথা না বলে পারলাম না। পরিবারের রান্নায় শিশু থেকে যুবকদের জন্য যে মমতা ও ইচ্ছা দেখানো হয়, আমাদের পরিবারের বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য তা কি দেখানো হয়? উত্তর অবশ্যই ‘না’। আসলে আমরা নিজেরাও যে একদিন বুড়ো হয়ে যাব, সেই দিকে আমাদের অনেকেরই নজর নেই। আজকে যিনি বৃদ্ব, তিনি একদিন শিশু ছিলেন, ছিলেন যুবক।
যাই হোক, ঈদে চাঁদে পোষাক আষাকে বয়স্কদের মতামত নিলেও খাবার দাবারে তাদের মতামত নেয়া হয় না। কেহ কি ভেবে দেখেন, ভাত বা পোলাউ একটু শক্ত হলে একজন বয়স্ক মানুষ কেমন কষ্ট পান? দাঁতের মাড়িতে কেমন লাগে কিংবা যাদের দাঁত নেই তিনি কি করে এমন শক্ত খাবার খাবেন? ডায়াবেটিকস সহ নানা রোগে আক্রান্ত একজন বৃদ্ব কি করে শক্ত গোসত বা মিষ্টি খাবার খাবেন? তার পেট কি এই শক্ত খাবার বা বেশী মশলা যুক্ত খাবার সইবে? কত কথা মাথায় এসে যাচ্ছে! লিখে শেষ করা যাবে না।
আমি শুধু আপনাদের এই টুকু অনুরোধ করব, নিজে নিজ পরিবারের বয়স্ক মানুষদের প্রতি খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে তাদের জন্য আলাদা খাবার তৈরী করুন। দুই দিনের দুনিয়ায় আমরা সবাই মুসাফির। কেহ আগে অতল গহব্বরে হারিয়ে যাবেন, আর কেহ দুইদিন পরে! এই তো!
এই ঈদের উৎসবে আপনাদের সবার ঘরে ঘরেই ভাল রান্না হবে এই কামনা করি। সাথে যারা আমার রেসিপি বন্ধু আছেন তাদের পরিবারেও বৃদ্ব/বয়স্ক আছেন। আমি এই বৃদ্ব/বয়স্ক মানুষদের জন্য একটা রান্না দেখিয়ে যেতে চাই। বৃদ্ব/বয়স্কদের জন্য রান্নায় প্রধান আইটেম অবশ্যই নরম ও ঝরঝরে হতে হবে, ঝাল কম হতেই হবে।
চলুন দেখে ফেলি। দই যোগে গরুর গোসত রান্না। আশা করি আপনাদের সবার ভাল লাগবে। সব উপকরন আমাদের হাতের নাগালেই আছে।
উপকরনঃ
– কেজি দেড় খানেক গরুর গোসত (দেখে নিতে হবে)
– পেঁয়াজ বাটা বা গ্রাইন্ড করা
– আদা
– রসূন
– হলুদ
– শুকনা মরিচ গ্রাইন্ড বা গুড়া মরিচ
– জিরা
– ধনিয়া (সামান্য)
– লবন (পরিমান মত)
– টক দই (দুই কাপ) – এই দই এর কারনে মাংশ নরম ও মোলায়েম হয়ে উঠবে।
– বাদাম বাটা (সামান্য, না থাকলে নাই)
– জয়ফল/ জয়ত্রী/ পুস্তদানা
– গরম মশলা (এলাচি/ দারচিনি)
– তেজপাতা
– তেল
(পরিমান সাধারন গোসত রান্নার মতই)
প্রনালীঃ
নরম এবং হাড় ছাড়া গোসত নিয়ে পরিকার করে ধুয়ে দই তে ভিজিয়ে রাখুন ঘন্টা খানেক।
চুলায় আগুন দিয়ে হাড়ি তুলে দিন। তেল/লবন সহ যাবতীয় মশলা দিতে থাকুন। দেখার ভাললাগার জন্য বিচি ফেলে কয়েকটা লাল শুকনা মরিচ দিন।
মরিচ গুড়া বা কয়েকটা শুকনা মরিচ গ্রাইড করেও দিতে পারেন। গরম মশলা সহ যাবতীয় মশলা দিন।
ভাল করে নাড়িয়ে মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে আধা ঘন্টার (গোসত না মজলে আরো গরম পানি দিতে পারেন এবং সময় আরো নিন) জন্য টিভি দেখতে চলে যেতে পারেন। আগুন মাঝামাঝি রকমের হলে ভাল।
ঠিক এমন একটা অবস্থায় আবার এসে পড়ুন। ঢাকনা খুলে কেমন ঝোল রাখবেন তা চিন্তা করুন। তিনি কি ঝোল পছন্দ করেন। এবার চামচে করে এক টুকরা গোসত নিয়ে হাত দিতে মলে দেখুন, গলে যায় কি না! কিংবা যথেষ্ট নরম হয়েছে কি না! প্রয়োজনে মুখে পুরে চিবিয়ে দেখুন। এবং ফাইন্যাল লবণ দেখুন। লাগলে দিন না লাগলে ওকে!
ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। যত্নের সাথে প্রিয় বৃদ্ব/বয়স্ক মানুষটার কাছে নিয়ে বলুন, এটা আপনার জন্য বিশেষ ভাবে রান্না করা হয়েছে।
আশা করি তিনি আপনার দিকে চেয়ে থাকবেন, আপনার জন্য মঙ্গল কামনা করবেন। ঈদের গোসতের এর চেয়ে আর ভাল রান্না কি হতে পারে?
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন।
কোফিয়তঃ ঈদে এবার শশুরবাড়ী যাচ্ছি, আখাউড়া। এই প্রথম ঈদ করব শশুরবাড়ীতে। ইতিমধ্যে আমার ব্যাটারী ও বুলেট সেখানে পৌঁছে গেছে। আর সে কারনে নেটে হয়ত আসতে পারব না (তবে মোবাইলে আপনাদের দেখতে থাকব প্রতিদিন), সময় মত আপনাদের কমেন্টের জবাবও দিতে পারব না। আশা করি আপনারা আবার ফিরে আসা পর্যন্ত ভাল থাকবেন।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।
LikeLike
ধন্যবাদ।
ঈদের শুভেচ্ছা।
LikeLike
ধন্যবাদ হুদা ভাই। আজ ফিরে এলাম আবার। আপনাকেও ঈদ মোবারক। প্রায় ১ সপ্তাহ কম্পিউটার থেকে দূরে ছিলাম!
(আখাউড়া জমে নাই। ঈদের পর গত ৩০ তারিখে আমার শ্বশুর ইন্তেকাল করেন ইন্না লিল্লাহে … রাজেয়ুন। উনাকে ঈদের পরদিন ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। শেষ নিঃশ্বাস ল্যাব এইডে ত্যাগ করেন। আমাদের আখাউড়া বেড়ানো হয় নাই। শোক কাটিয়ে এখনো সবাই উঠতে পারছি না।)
শুভেচ্ছা।
LikeLike
জীবন থেমে থাকে না। যেমন চলছিল তেমনই চলবে সব কিছু। শূন্য থাকবে না কিছুই। শুধু মনের শূন্যতা হাহাকার করবে অজান্তেই।
LikeLike
Thanks a lot, what a nice recipe..
LikeLike
Thanks you very much Dear Sister. Hope you are fine and doing well.
LikeLike
সাহাদাত ভাইয়ের ব্লগ মানে হল সহজে মজার মজার রেসিপি শেখা। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
এবার ঈদে সরষে ইলিশও করব। বোরহানী, চটপটি, জর্দা, পরোটা, কাচ্চি করব। পাহাড়ী খাসী কেনা হয়েছে। কাচা তেতুলের ভর্তাও করছি। আর এগুলো করতে আপনার ব্লগে আসতেই হবে বারবার।
ঈদ মোবারক আপনাদের সবাইকে।
LikeLike
ধন্যবাদ সিষ্টার। আপনার মন্তব্য পড়ে মন ভাল হয়ে গেল।
LikeLike
সুন্দর রেসিপি।
ঈদের শুভেচ্ছা রইলো উদরাজী ভাই। আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক।
LikeLike
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রুমান ভাই।
LikeLike
Balo bolachen… Balo laglo..
LikeLike
ধন্যবাদ খালেদ ভাই।
LikeLike
“যত্নের সাথে প্রিয় বৃদ্ব/বয়স্ক মানুষটার কাছে নিয়ে বলুন, এটা আপনার জন্য বিশেষ ভাবে রান্না করা হয়েছে। আশা করি তিনি আপনার দিকে চেয়ে থাকবেন, আপনার জন্য মঙ্গল কামনা করবেন।”— এই দুই লাইনেই আপনার লেখা অন্য সব্বার সব লেখা থেকে আলাদা হয়ে ১০০ তে ২০০ নম্বর পেয়ে গেল, দাদা। 🙂
LikeLike
ধন্যবাদ বোন। আসলে আমরা দিন দিন যত বেশী ধনী/জ্ঞানী হয়ে যাচ্ছি ততই এই বৃদ্ব মানুষ গুলোর প্রতি অমানবিক আচরণ করছি। এটা উচিত নয়।
সামান্য সহানুভুতিতে অনেক অনেক ভালবাসা গড়ে উঠতে পারে।
শুভেচ্ছা নম্বর দেবার জন্য। আপনাদের এই কমেন্ট গুলোই আমাকে সামনের পথে দেখাচ্ছে।
ভাল থাকুন।
LikeLike
পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD