কাঁকরোল সবাই চিনেন কিন্তু খেতে চান না অনেকেই। কিন্তু কথা হচ্ছে না খেলে বাজারের এত কাঁকরোল কোথায় যায়? কাঁকরোল তো মিষ্টি না যে, জ্বিনভুত এসে কিনে নিয়ে যাবে! কাঁকরোলের প্রতি একটা অবিচার আমরা চালিয়ে আসছি অনেক বছর, শিশুদের আমরা বড়রা ইচ্ছা করেই খেতে দেই না। বড় পরিবারে এক দুইজন পাওয়া যেতে পারে যারা ইচ্ছা করে কাঁকরোল খেতে চান বা খান! চলুন কাঁকরোল প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আমাদের কৃষি মন্ত্রনালয় কি বলে দেখে নেই।
ছবিঃ কালের কন্ঠ থেকে নেয়া।
বাংলাদেশে কাঁকরোল একটি জনপ্রিয় সবজি। এটি গ্রীষ্মকালে চাষ করা হয়। এদের স্ত্রী পুরুষ ফুল আলাদা গাছে জন্মে। কাঁকরোল গাছ কন্দমূল উৎপন্ন করে যায় সাহায্যে মূলত বংশবিস্তার করে। কাঁকরোল বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। কাঁচাফল তরকারী, ভাজি বা সিদ্ধ করে ভর্তা হিসেবে খাওয়া যায়। কাঁকরোল প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, লৌহ ক্যারোটিন আছে। দোঁআশ থেকে এটেল দো-আঁশ মাটি কাঁকরোল চাষের জন্য উত্তম। তবে জৈব সার যোগ করে অন্যান্য মাটিতে কাঁকরোল চাষ করা যায়।
কাঁকরোলের বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে। যেমন- আসামী, মণিপুরী, মুকন্দপুরী মধুপুরী ইত্যাদি। আসামীঃ এ জাতের ফলগুলো সুস্বাদু, গোলাকার ও বেঁটে হয়ে থাকে। মণিপুরীঃ এ জাতের ফল লম্বাটে ও অপেক্ষাকৃত চিকন, তবে ফলন বেশী দিয়ে থাকে। কাঁকরোলের বীজ বপন বা মোথা রোপণের উত্তম সময় মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য জুন মাস। মধ্য জুলাই হতে মধ্য সেপ্টেম্বর মাস কাঁকরোল সংগ্রহের উত্তম সময়।
কাঁকরোল প্রসংগে আরো জানতে এখানে ক্লিক করতে পারেন। আমাদের দেশ কৃষি নির্ভর দেশ। চাষাবাদে আমাদের মনোযোগী হতেই হবে। কৃষি মন্ত্রনালয় সহ নানান বিভাগ খাদ্য নিয়ে কাজ করছে, আমরা তাদের অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। ভুল মানুষের ভীড়ে এখনো অনেক মুক্ত মনের মানুষ আছেন যাদের জন্য আমরা এখনো বেঁচে আছি। ধন্যবাদ সেই সব কৃষিবিদ ভাইবোনদের, যারা এখনো গ্রাম, উপজেলায় পড়ে খাদ্য তৈরীতে সাহায্য করেন। ধন্যবাদ পাবেন আমাদের কৃষক ভাইবোনরাও।
চলুন দেখি ফেলি, কাঁকরোলের একটা সাধারন রান্না। খানিকটা ঝোল থাকবে, বলা যেতে পারে কাঁকরোলের ঝোল।
প্রণালীঃ
কাঁকরোল ফালি করে কেটে নিন। সাথে একই সাইজের কয়েকটা আলু দিতে পারেন। সামান্য লবন দিয়ে কাঁকরোল এবং আলুকে সিদ্ব করে নিন।
এবার অন্য একটা হাড়িতে তেল গরম করে তাতে হাফ কাপ পেঁয়াজ কুঁচি (পরিমান কাঁকরোলের উপর নির্ভর করবে) ভাজুন এবং লবন, সামান্য রসুন, হলুদ গুড়া, মরিচ গুড়া দিয়ে সামান্য পানি দিয়ে একটা ঝোল বানিয়ে নিন। এক টুকরা রুই মাছ (যে কোন মাছ হলেও চলবে, হাতের কাছে যা পাবেন) ঝোলে দিয়ে দিন। মাছ শুধু স্বাদ বাড়ানোর জন্যই দেয়া হয়েছে।
মাছ নরম হয়ে গেলে তা ভেঙ্গে দিন। যদি পারেন মাছের কাঁটা তুলে ফেলতে পারেন। না হলে নাই, খেতে বসে খেয়াল করলেই চলবে। ব্যস হয়ে গেল মাছের ঝোল, যা কাঁকরোলে ব্যবহার করা হবে। (পানি লাগলে দিতে পারেন)
এবার কাঁকরোল ও আলু (আলু বেশি নয়) দিয়ে দিন।
ভাল করে মাখিয়ে দিন। মিনিট পাঁচেক জ্বাল দিন।
এবার দুই কাপ পানি (একটু বেশি হলেও দোষের কিছু নাই) দিয়ে দিন।
আগুনের আঁচ বাড়িয়ে একটা ঢাকনা দিয়ে মিনিট ১৫ জ্বাল দিন। মাঝে ঢাকনা উলটে দেখে নেবেন। ফাইন্যাল লবন দেখুন। লাগলে দিন, না লাগলে ওকে! কাঁকরোল আলু নরম হল কিনা দেখে নিন। ঝোল শুকিয়ে ফেলবেন না। কয়েকটা কাঁচা মরিচ দিতে ভুলবেন না।
ব্যস হয়ে গেল কাঁকরোল রান্না। দেখুন কত সহজ এবং সুন্দর। যারা রাতে রুটি খান, তাদের জন্য এটা একটা চমৎকার রান্না। খেয়ে দেখুন, কত মজার এবং কত ভাল লাগে।
সবাইকে কাঁকরোল খেতে উদার আহ্বান জানাই। আমাদের সবজি, আমরা খাব।
যে হারে আমাদের নতুন প্রজন্ম চিকেন কেন্দ্রীক ( মুরগী বললে আবার অনেকে অপমান বোধ করে, তাই চিকেন ) হয়ে গিয়েছে, তাতে করে ভবিষ্যতে শুধু মুরগী চাষই(!) করতে হবে সবার।
অথচ এই দেশীয় সব্জি দিয়েই কত চমৎকার খাবার তৈরি করা যায়।
চমৎকার পোস্টের মাধ্যমে আরও অনেক কিছু জানলাম সাহাদাত ভাই।
শুভেচ্ছা রইল।
LikeLike
ধন্যবাদ দাইফ ভাই। আসলেই, সবাই শুধু চিকেন নিয়ে আছে!
সরকারের কিছু লোক এখনো একটা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।
সবজি চাষে আসলে সবাইকে এগিয়ে আসতেই হবে।
LikeLike
খেতে তেমন আপত্তি নেই! তবে না খেতে হলেই খুশী হই। কাকরোলে বীজের পরিমাণ অনেক বেশী। বীজ যদি শক্ত হয়ে যায়, তবে খাওয়ার সময় ভারী অস্বস্তি লাগে।
মাছ মাংসের সাথেও কিন্তু কাকরোল বেশ চলে। ভাজি হিসেবেও মন্দ নয়। রুটির সাথে খেতেও ভালোই লাগে।
অন্য সব্জির অনটন হলে কাকরোলই ভরসা। স্বাদের তুলনায় দাম কিন্তু বেশী। আমার অপছন্দের এটাও আর এক কারণ।
LikeLike
ধন্যবাদ হুদা ভাই, আপনার সাথে একমত। দামটা আমার কাছেও সব সময় বেশী মনে হয়।
কাঁকরোলের বিচিতে একটা ঘ্রান আছে? চিবালে বুঝা যায়,ইউনিক!
LikeLike
কাকরোল রান্না আমার অসহ্য লাগে। আমি কাকরোলের পুর, ভাজি, চাক চাক করে বেসনে চুবিয়ে বেগুনীর মত খেতে রাজি আছি।
LikeLike
হা হা হা…। চাক চাক করে বেসনে চুবিয়ে… যিনি এটা খেতে পারবেন তিনি সব কিছুই পারবেন।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
কাঁকরোল খেতে পছন্দ করেন না বা খেতে চান না এমন কাউকে আমি দেখিনি!! আমার প্রিয় একটি ফল এই কাঁকরোল। কাঁকরোলের ভর্তাটা বেশি ভালো লাগে আমার।
LikeLike
হা হা হা… যাক এতদিনে একজন কাঁকরোল লাভার পাওয়া গেল!
LikeLike
আজকে দুপুরে কাঁকরোল ভাজি দিয়ে ভাত খেয়েছি। অসাধারণ স্বাদ ছিল। 🙂
LikeLike
হা হা হা… আসলে আমরা বাঙ্গালীরা এই সবই খাই। আমাদের জনপ্রিয় খাবার। শিশুকালে যা দেখেছি তাই বড় হয়ে ভাল লাগবে।
শুভেচ্ছা। খাবার নিশ্চয় মায়ের হাতের রান্না ছিল।
LikeLike
মায়ের হাতের রান্না হলে ভালো লাগতো আরো বেশি। খেয়েছিলাম মুরাদপুরের একটা হোটেলে।
LikeLike
আমাদের সবজি, আমরা খাব।
LikeLike
হা হা হা…
LikeLike
পিংব্যাকঃ রেসিপিঃ কাঁকরোল রান্না | OntoreBangladesh
পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD
কাঁকরোলের কাঁটা না ফেলে খাওয়া যায়?
LikeLiked by 1 person
কাঁটা না ফেলেও রান্না দেখেছি, খাবারের সময়ে সমস্যা হয় না, নরম হয়ে পড়ে। তবে কাঁটা ফেলেই রান্না হয় বেশি। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আনন্দে কাটুক সময়।
LikeLiked by 1 person