গ্যালারি

রেসিপিঃ ইলিশ ভাজা খেতে মজা


ইলিশ মাছ আমাদের জাতীয় মাছ। এই মাছের স্বাদ ও ঘ্রান দুনিয়ার আর কোন মাছের আছে কিনা আমার জানা নেই। যে একবার ইলিশ মাছ খেয়েছে, সে মরার আগ পর্যন্ত এই মাছের স্বাদ ভুলতে পারবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আর আমাদের এই জাতীয় মাছের চোহারা! আহ, কি সুন্দর। তবে আমি এখন পর্যন্ত তাজা (প্রান আছে এমন) ইলিশ মাছ দেখি নাই। মরার আগে একটা তাজা ইলিশ মাছ হাতে নিয়ে দেখতে চাই।

ছবিঃ লাকসাম ওয়েব থেকে নেয়া।

আমরা ছোট বেলায় প্রচুর ইলিশ মাছ খেয়েছি। আমার বাবা ইলিশ মাছ কিনতেন প্রচুর। ইলিশের পেটের ডিম দিয়েও এক বেলা রান্না হত। এক টুকরা ইলিশ মাছ কিংবা এক টুকরা ডিম এবং সামান্য ঝোল, তাতেই এক বেলা খেয়ে উঠতাম আমরা। আমি নিজেও অনেক ইলিশ মাছ কিনেছি কয়েক বছর আগেও। এখন আর বড় ইলিশ কিনতে পারি না। মাছ দোকানে যেয়ে বড় ইলিশ দেখে চেয়ে থাকি! আমাদের জাতীয় মাছের এত দাম হবে কেন?

যাই হোক, সর্ষে ইলিশের আগে একটা রান্না দেখিয়েছিলাম। মাঝে আরো কয়েকটা ইলিশ খেয়েছি তবে রেসিপি রেকর্ড করতে পারি নাই। গত কয়েকদিন আগে ছোট মাঝারি ৬ টা ইলিশ মাছ কিনেছি, দাম প্রতি পিস ৩৫০ টাকা। আমার মনে হয় টাকার ওজন মাছের চেয়ে বেশী হবে। এই সাইজের গোটা মাছের ছবি তুলতে ইচ্ছা হয় না! ছোট, মনের মত নয়!

প্রয়োজনীয় উপকরনঃ
– একটা ইলিশ মাছ (ইচ্ছা মত কাটুন। হা হা হা… ইলিশ কাট কিন্তু একটাই!)
– পেঁয়াজ বাটা এক চামচ
–  হাফ চামচ আদা বাটা
– পরিমান মত গুড়া মরিচ (ঝাল বেশি না হওয়া ভাল)
– পরিমান মত গুড়া হলুদ (হাফ চামচই এনাফ)
– এক চিমটি পাপড়িকা (না থাকলে নাই, পাপড়িকার জন্য স্বাদ একটু বেড়ে যায়)
– পরিমাণ মত লবণ
– হাফ কাপ তেল
– ধনিয়া পাতা
– হাফ চামচ লেবু রস
* ইলিশ ভাজিতে রসুন না দেয়াই ভাল, কারন এতে ইলিশের ঘ্রান নষ্ট হতে পারে।

প্রণালীঃ

ইলিশ কেটে ভাল করে লবন পানিতে ধুয়ে নিন।


মশলা গুলো মাছের উপর ছিটেয়ে দিন। লবণ ও লেবু রস দিতে ভুলবেন না।


সামান্য তেল দিয়ে মাছ গুলো মেখে আধা ঘন্টার জন্য রেখে দিন।


এবার কড়াইতে গা গা তেল গরম করে মাছ গুলো ছেড়ে দিন। (যে কোন ভাজাভাজিতে কড়াই থেকে একটা নিদিষ্ট দূরত্বে থেকে নাড়াবেন, সাবধানে কাজ করা ভাল)


এক পিট হয়ে গেলে অন্য পিঠ উলটে দিন।


এবার কিছু ক্ষনের জন্য একটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন। মিনিট ১০ এর বেশী নয়।


কতটুকু ভাজা চান সেটা আপনার উপর নির্ভর করবে। আমার একটু পোড়া চাই, চিবিয়ে কাঁটা কুটা সহ খেতে চাই।


যদি ঘরে ধনিয়া পাতা থাকে তবে কুচি করে কেটে সামান্য ভেজে, মাছের উপর দিয়ে দিতে পারেন।


ব্যস পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। ইলিশ ভাজা খেতে মজা। এমন একটা ইলিশ আমার বুলেটের একাই লাগে! হা হা হা।। আসলে এত দামের ইলিশ, মনে হয় টাকাই চিবাই!

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন

চাইলে দেখতে পারেন – রেসিপিঃ সরিষা ইলিশ

ইলিশ মাছ নিয়ে নানান তথ্য উইকিপিডিয়া থেকে দেখে আসতে পারেনঃ
ইলিশ (বৈজ্ঞানিক নাম:Tenualosa ilisha) বাংলাদেশ এর জাতীয় মাছ। বাঙ্গালিদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয়। এটি একটি সামূদ্রিক মাছ, যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে প্রবেশ করে। এ ছাড়াও ইলিশ খাদ্য হিসেবে ভারতের বিভিন্ন এলাকা যেমন, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা, আসামেও অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। বাংলা ভাষা, ভারতের আসাম এর ভাষায় ইলিশ শব্দ টি পাওয়া যায় এবং তেলেগু ভাষায় ইলিশকে বলা হয় পোলাসা (তেলেগু: పులస Pulasa or Polasa), ও পাকিস্তানের সিন্ধ ভাষায় বলা হয় (Sindhī: پلو مڇي Pallu Machhi), ওড়িয়া ভাষায় (ওড়িয়া: ଇଲିଶି Ilishii) গুজরাটে ইলিশ মাছ মোদেন (স্ত্রী) বা পালভা (পুরুষ) নামে পরিচিত। ইলিশ অর্থনৈতিক ভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মমন্ডলীয় মাছ। বঙ্গোপসাগরের ব-দ্বীপাঞ্চল, পদ্মামেঘনাযমুনা নদীর মোহনার হাওরে থেকে প্রতি বছর প্রচুর পরিমানে ইলিশ মাছ ধরা হয়। এটি সামুদ্রিক মাছ কিন্তু এই মাছ বড় নদীতে ডিম দেয়। ডিম ফুটে গেলে ও বাচ্চা বড় হলে (যাকে বাংলায় বলে জাটকা) ইলিশ মাছ সাগরে ফিরে যায়। সাগরে ফিরে যাবার পথে জেলেরা এই মাছ ধরে। এই মাছের অনেক ছোট ছোট কাটা রয়েছে তাই খুব সাবধানে খেতে হয়।

19 responses to “রেসিপিঃ ইলিশ ভাজা খেতে মজা

  1. ঢাকায় ইলিশের দাম অনেক বেশী দেখছি। এই সাইজের ইলিশ( মাছের টুকরো দেখে বলছি) সিলেটে ১০০০ টাকা হালি কিনে মেয়ের বকা খেয়েছি। জামাই নাকি ৮০০তেই আনতে পারতো। আমি বুঝিনা, সিলেটে ইলিশ সস্তা হয় কি করে? আমি ডিমওয়ালা ইলিশ পারত্বপক্ষে কিনিনা। কাল সিএইচডিতে এইসাইজের ১টি ইলিশের দাম বল্লো ৪৮০ টাকা।

    আমার ছেলেবেলায় দেড় টাকা দিয়ে ২টো ইয়া বড় পদ্মার ইলিশ কিনে আমার হাতে ঝুলিয়ে দিতেন নানা। আর আমি নাচতে নাচতে তা ঘরে নিয়ে আসতাম। ইলিশ কাটার পরে কিন্তু আর ধোয়া নেই। বেশী ধুলে ইলিশের স্বাদই চলে যায়। আপনার ইলিশ দেখে মনে হচ্ছে সার্ফ-এক্সেল দিয়ে ধোয়া। :p

    জিবন্ত ইলিশ হাতে নিবেন কি করে? ইলিশ তো আকাশ দেখলেই অক্কা পায়। আগে কুস্টিয়া আসা/যাওয়ার পথে ফেরী থেকে চোখে পড়তো হাজারো ইলিশের নৌকা। এখন আর সেই নদীই তো নেই।
    অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথাই লিখে ফেললাম। ইলিশভাজা দারুন মজা গরম গরম খেলে। 🙂

    Like

    • সাত সকালে অফিসে এসে ইলিশ পোষ্ট দিয়ে অফিসের কাজে লাগব ভাবছি। এমন সময় আপনার উত্তর! আজ সারাদিন আর কাজ করা হবে না!

      হাসতেই আছি! হা হা হা…। আপনার সাতকড়া গতকাল রাতে রান্না হয়েছে। আজ বিকালে পোষ্ট দেব ভাবছি, যদি সময়ে কুলায়।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  2. আহা, ইলিশ দেখে জিভে জল!ইলিশ মাছ ভাজার উপরে আজ পর্যন্ত কোনো খাদ্য মনে হয়না তৈরী হয়েছে! আর এই ইলিশকে ছোট বলছেন কেনো, এইটা তো মাশাল্লাহ বেশ বড়ই

    ছোটবেলায় ইলিশ খাওয়ার কত স্মৃতি, ইলিশের ডিম, পদ্মার ইলিশ, আবার ডিমওয়ালা ইলিশের স্বাদ কম, বর্ষাকালের ইলিশের স্বাদ, আবার দুর্গাপুজার পর পর ইলিশের স্বাদ কমে যাওয়া—সব মিলিয়ে ইলিশ আমাদের বাঙালী জীবনের অংশ।

    ইলিশ কাটের কথায় মনে পড়ল–ক্লাস টু্-থ্রীতে পড়ার সময়, আমাকে আর বাবাকে বাসায় রেখে মা সিলেটে একবার নানীকে দেখতে গিয়েছিলেন। রাতে খাওয়ার জন্য বাবা ফ্রীজ থেকে আস্ত বিশাল ইলিশ বের করে, পরিশ্রম বাঁচানোর জন্য অনেক বড় বড় টুকরো করেন, বড় মাছের পিঠ আর পেটি একসাথে রাখলে যেরকম হয় আর কি। বলাবাহুল্য, সেই আস্ত প্লেটের সাইজের টুকরো পেয়ে মহাআনন্দে খেয়েছিলাম, এরপর থেকে মায়ের কাছে অনেকদিন আবদার করতাম, বাবার মত করে কাটতে হবে!

    Like

  3. আহা! ইলিশ।

    ছোটবেলায় সিজনে (চট্টগ্রামে) প্রতিদিন ইলিশ খেতে হতো। খেতে খেতে বিরক্ত হতাম।
    মনে আছে দিনে দুইবার জেলেরা নৌকা নিয়ে ফিরত।

    প্রতিবছরই দুই-তিন মণ লবণ দিয়ে রাখা হতো।
    কেজি ২-৩ টাকা। শান্তির মা ডাকতাম এক জেলেনীকে। ইলিশ আর তার নাম একাকার হয়ে গেছে।

    আমার বাবাও ভালো রান্না পারেন। আচার দিতে পারেন। ইলিশ মাছে লবন দেয়ার কাজটাও তিনি করতেন। বছর দুয়েক আম্মা আর বাবাকে আলাদা জায়গায় থাকতে হইছিলো। মাঝে মাঝে তাদের রান্না বিনিময় হতো। সে সব ভাবলে খুবই মজা লাগে।

    🙂

    Like

    • সুজন ভাইতো দেখছি পুরাই ইলিশের সাথে বসতি গড়ে তুলেছেন। বেশ ভাল লাগল শুনে।

      আপনার বাবাকে আমার সালাম দিবেন। তিনিও রান্না করতে জানেন শুনে বেশ ভাল লাগল। আপনারা লাকী!

      লবন ইলিশের কথা মনে করিয়ে দিয়ে জিবে জল এনে দিলেন।

      শুভেচ্ছা নিন।

      Like

  4. একাবার চাঁদপুর গিয়ে নিজের হাতে ইলিশ ধরেছি। মামি রান্না করেছে। সেই স্বাদ আর সেই খুশবু আজও ভুলতে পারি না।

    Like

  5. ইলিশ ভাঁজা খেতে মজা গরম গরম হলে!
    চাঁদপুরের দুই বছরে যে পরিমাণ ইলিশ খেয়েছি, তা সারা জীবনের খাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি।
    ইলিশের যে কোন রান্নাই চমতকার!

    Like

  6. আপনার এই রেসিপিটা আমার খুব ফেভারিট তালিকায় থাকল। ইলিশে রসুন দিতে নেই জানতাম না। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এ পোস্টটির জন্য।

    Like

  7. বাঙ্গালী অথচ ইলিশ পছন্দ করেনা এমনটি পাওয়া কঠিন!
    ইলিশ ভাজা দিয়ে কি গরম বা ঠান্ডা ভাত, সবই যেন অমৃত লাগে।
    আর সাথে অবশ্যই ভাজা লংকা!!

    সুস্বাদু পোস্টের জন্য ধন্যবাদ রইল সাহাদাত ভাই।

    Like

  8. বেশ কিছুদিন পর ব্লগে এলাম, ছবি গুলো দেখা যাচ্ছেনা কেন ?

    Like

    • ধন্যবাদ ল্যাটিচুড ভাই।
      ফটোবাকেট এর ফ্রী ব্যান্ডউইথ শেষ হয়ে যাওয়াতে এমন সমস্যা হচ্ছে। আশা করি, আজ কালের মধ্যেই এই সমস্যা শেষ হয়ে যাবে এবং আবারো ছবি গুলো সুন্দর করে দেখে যাবে।

      শুভেচ্ছা।

      Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      পাপড়িকা হচ্ছে ক্যাপ্সিকাম এর শুকনা গুড়া। এটা ইউরোপ, মেরিকায় বেশী ব্যবহার হয়ে থাকে। ক্যাপ্সিকাম ছোট ছোট টুকরা করে শুকিয়ে ওরা এই ভেজষ বানিয়ে থাকে। নানান প্রকারের ভাঁজা ভুজিতে দিলে স্বাদ বেড়ে যায়। আজকাল আমাদের দেশের নানান বড় গ্রোসারীতে এটা পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমি পেয়েছিলাম, আমার বোনের কাছ থেকে সে ইটালী থেকে আমার জন্য পাঠিয়েছিল।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  9. পিংব্যাকঃ এক নজরে সব পোষ্ট (https://udrajirannaghor.wordpress.com) | BD GOOD FOOD

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]