গ্যালারি

রেসিপিঃ মোটা রুটি (লংঘরখানা/লঙ্গরখানা স্টাইল)


কিছু দিন আগে এক বোন আমার কাছে না ফুলে উঠে এমন রুটি প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিলেন। প্রতি রোজার ইফতারিতে আমরা এমন না ফুলে উঠা রুটি খেয়ে থাকি। তবে কিছুতে রেসিপিটা রেকর্ড করতে পারছিলাম না। সময়াভাবে, আমি বাসায় পৌঁছাতে পারি ইফতারির সামান্য আগে, সুতারং রিক্স নিয়ে আমার ব্যাটারী আমার জন্য বসে থাকেন না! গতকাল শুক্রবার মোক্ষম সময় পাওয়া গেল। সকালে আমরা দুইজন মিলে মাছ বাজারে গিয়েছিলাম (ঈদে এবার মাছ খাব), দুপুরের নামাজের পর এসেই আমরা লেগে গেলাম, ইফতার বানাতে। টানা চার ঘণ্টায় আমরা যা যা বানিয়ে ছিলাম –

১। গরুর মাথার ঝাল গোশত
২। ডিম চপ (হেভি মজাদার, যেমন দেখতে তেমন খেতে)
৩। সাধারন সেমাই (ঈদের রান্না)
৪। নারিকেল সেমাই (ঈদের রান্না, আপনাদের দেখানোর জন্যই আজ করা হল)
৫। মোটা রুটি (ইফতারে)
ও অন্যান্ন (শরবত, শশা ইত্যাদি)।

এ ছাড়া রাতের খাবারের জন্য (সেহেরী) রান্না হয়েছিল রুই মাছ রান্না এবং কলমি শাক চিংড়ী দিয়ে। সে যাই হোক, আরো কথা বলার সময় আছে! এখন মোটা রুটির রেসিপি দেখুন। বর্তমান বাংলাদেশে যাদের বয়স ৪৫ বা তার বেশি তারা জানেন লঙ্গরখানা কি! লংগরখানার রুটি খায় নাই, এমন বাঙ্গালী এখন বিরল হয়ে যাচ্ছে! হা হা হা… আসলে লঙ্ঘরখানায় এত সময় কোথায়? পাতলা ও চিকন রুটি বানাবার সময় কোথায় পাবে? তাই রুটি মোটা করে বানানো হয় যাতে একটা খেয়েই পেট ভরে যায়। খুবই সহজ বানানো, দেখে নিন। কাজে লাগবে।

প্রতিদিন রাতে যারা ভাত খান না তাদের জন্য এই রুটি বেশ মজাদার হবে। ভাল তরকারী না হলেও চলে, যে কোন তরকারীর সাথে এই রুটি খেতে পারেন।

রেসিপি পরিমাণঃ
– দুই কাপ আটা (আপনি চাইলে ময়দা দিয়েও বানাতে পারেন)
– চিনি এক চা চামচ
– লবণ এক চিমটি
– তেল চার চা চামচ
– গরম পানি পরিমাণ মত

প্রণালীঃ
১
মসৃণ তলার কোন বোল নিন এবং তাতে আটা নিন।

১
লবণ, তেল ও চিনি মিশিয়ে নিন।

১
গরম পানি যোগে আস্তে আস্তে খামির বানাতে থাকুন।

১
নরম এবং মিশে এমন চমৎকার দেখাবে।

১
কত বড়, কত মোটা চান, সেই অনুসারে পিস করুন। (দেখানোর জন্য মাত্র চারটে! আসলে আগে রুটি বেলে ফ্রিজে রেখে দেয়া ছিল বলে আমরা কম বানিয়েছি)

১
রুটি বেলে জমিয়ে রাখুন। খেয়াল রেখে যেন একটার সাথে একটা লেগে না যায়।

১
গরম রুটির তাওয়াতে ছেপে ছেপে সেঁকে নিন। এই রুটি ফুলে উঠবে না! এই জন্যই মোটা রুটি বলা হয়।

১
ব্যস, পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত। তবে মনে রাখবেন, বেশি ক্ষণ ঠাণ্ডায় রাখলে রুটি শক্ত হয়ে যাবে, তাই বানানোর সাথে সাথে খেতে পারলে মজাই মজা।

১
যে কোন তরকারীর সাথে এই রুটি খাওয়া যেতে পারে। তবে গরুর মাথার গোশত রান্না হলে বলেন আর কি চাই!

১
আসলে ইফতারে আমরা ভাজাভুজি এড়িয়ে চলি বলে, এই রুটি নিয়ে বসি। সাথে থাকে যে কোন একটা তরকারী, সবজি। পেটো ভরে, শরীরও ভাল থাকে। নামাজ পড়ে এসে এক কাপ চা, বলেন আর কি চাই!

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন

24 responses to “রেসিপিঃ মোটা রুটি (লংঘরখানা/লঙ্গরখানা স্টাইল)

  1. কাজের রেসিপি, ধন্যবাদ! খেতে কীরকম, উদরাজী ভাই, মোটামুটি পাতলা রুটির মতই?

    Like

    • রনি ভাই, দুটো দুই রকম স্বাদ। তবে সকালে প্রতিদিন মোটা রুটি চলবে বলে আমি মনে করি না। মোটারুটি ভাতের বিকল্প হতে পারে। যারা রাতে ভাত খান না তাদের জন্য বেশ হবে বলে আমার মনে হয়।

      রনি ভাই আজ আরো রেসিপি আছে!

      Like

  2. হা হা হা, দারুন পোস্ট!
    এখন মজার কথা বলি, এই রুটিই প্রতিদিন আমরা খেয়ে থাকি। বাসায় এই মোটা রুটি আর পরোটা বানানো হয়ে থাকে। আমি পাতলা রুটি খুব কমই পছন্দ করি। এই মোটা রুটি দিয়ে যা ইচ্ছে তা খাওয়া যায়, স্বাদ লাগে অনেক।

    চমৎকার এক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ রইল সাহাদাত ভাই।

    Like

    • ধন্যবাদ দাইফ ভাই, আজ কি আপনিই আমাকে ফোন করেছিলেন? আমার কোন জানি মনে হচ্ছে আপনিই ফোন করেছেন? ঈদের দিনের আপনার মেসেজের অপেক্ষায় থাকলাম।

      পুরান ঢাকায় চাপাতি খেতে সবাই পছন্দ করে থাকেন। সকালের নাস্তায় চাপাতি চলে ভাল। চাপাতি রেসিপি আমি মালঞ্চ হোটেল, ইলিফ্যান্ট রোড থেকে জেনে নিয়েছি। একদিন বাসায় বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিব। খালি সময় পাচ্ছি না!

      শুভেচ্ছা দাইফ ভাই।
      (যদি ফোন আপনি না করে থাকেন, তবে আমি (আমার অনুমান) ক্ষমাপ্রার্থী)

      Like

      • হা ভাইয়া, পুরোনো ঢাকার বেশিরভাগ মানুষই চাপাতি রুটি পছন্দ করে। আমি আসলে ছোট পাতলা রুটি খুব একটা পছন্দ করিনা। হয় চাপাতি নয় এই মোটা রুটি খেয়ে থাকি।

        আর আমি ফোন দেইনি ভাইয়া, হা হা হা।
        আর এসব “ক্ষমাপ্রার্থী” এগুলো বললে কিন্তু রাগ করবো অনেক।

        Like

        • ধন্যবাদ দাইফ ভাই, আমি মোটামুটি আবেগী মানুষ। কথায় কথায় চোখে জল এসে পড়ে! আপনার ফোনের জন্য ধন্যবাদ। আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল লেগেছে। আপনি নিঃসন্দেহে একজন ভাল মানুষ। আমি আপনার জন্য দোয়া করে গেলাম।

          বন্ধুত্ব এমন একটা ব্যাপার যে, না দেখেও কারো সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যেতে পারে। আপনি সহ রেসিপি প্রিয় অনেকে আছেন যাদের আমি দেখি নাই, কথা বলি নাই কোনদিন, কিন্তু বন্ধু মনে করি। আপনাদের একজনও যখন দেখি রেসিপি পড়ে গেছেন তখন খুশির আর সীমা থাকে না।

          শুভেচ্ছা।
          (তা হলে আজ সকালে যে বন্ধু ফোন করেছিলেন, ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করি তার নাম জানতে)

          Like

  3. আমি কোনোদিন রান্না করিনি। আমাকে দিয়ে কি এ কাজ হবে!

    Like

    • আরে আমাদের কামরাঙ্গা ভাই যে, হবে মানে! দৌড়াবে! রান্না হচ্ছে ভালবাসার অপর নাম, ভালবাসতে জানে যে, রান্না সেই করে থাকে!

      কেমন আছেন নিজাম ভাই, অনেকদিন পর দেখলাম। আশা করি ভাল আছেন, ভাল থাকুন।

      Like

  4. বাহ ! দারূণ আর সহজ রেসিপি।
    এই রুটিটি দেখে কুলচা রুটির কথা মনে পড়ে গেল। প্রথম রোজায় কুলচা রুটি বানাতে গিয়ে সবজি পরোটা হয়ে গিয়েছিল।

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      কুলচা রুটি! নাম শুনেই জিবে জল! কি করে এই কুলচা রুটি বানাতে হয়, জানলে জানান। জেনে রাখি, কোনদিন কাজে লেগে যাবে হয়ত।

      খুব সাধারন একটা ‘পার্টি পারটা’র রেসিপি দিব সামনে, আশা করি সাথে থাকবেন। সবজি পরটা বানানোর ইচ্ছাও আছে সামনে।

      শুভেচ্ছা নিন।

      Like

      • কুলচা রুটি পুরান ঢাকার একটা বিখ্যাত খাবার। খুব ভাল বানাতে পারিনা। যেটুকুন শিখেছি সেটাই লিখছি সাহাদাত ভাই। এই রুটির মাঝখানের পুরটা আলু, গাজর আর ডিম দিয়ে তৈরি করতে হয়। সবজিগুলো যেন একটু বেশিই কুচিকুচি হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। পুরে চাইলে মুরগী কুচিও দিতে পারেন।

        ময়দার সাথে ইষ্ট মিশিয়ে অন্তত আধা ঘন্টা ময়ান করে রাখতে হবে। ইষ্ট গরম পানিতে দিয়ে গুলে নিতে হয়। এই মিশ্রণটিই ময়দার সাথে দিয়ে ময়ান করতে হবে।

        এরপর রুটি বেলার সময় বেশি করে পুর দিয়ে ধীরে ধীরে বেলে রুটিটি সেকে নিতে হবে। রুটি সেকার সময় তাওয়াতে একটু ঘি দিতে পারেন।

        আপনার মতন গুছিয়ে লিখতে পারলাম না সাহাদাত ভাই।

        Like

  5. আমার মনে হয় শক্ত হবে, চিবানো যাবে কিনা সন্দেহ! রুটি চিবানো এমনিতেই কষ্টকর, তাই আমি রুটি খেলে সব সময় সিদ্ধ আটার রুটি খাই। কাঁচা আটার রুটি চিবানোর মত শক্তি আমার চোঁয়ালের নেই, পাকস্থলীরও নেই তা হজম করার শক্তি। অতএব বাদ!!
    শুভ কামনা।

    Like

  6. নিজের মোটাপনা কমাতে চিন্তা করছিলাম রুটি খাব, কিন্তু রুটি বানানোর ঝামেলার জন্য শুরু করতে পারছিলাম না, আপনার রেসিপি পড়ে মনে হচ্ছে পানিভাত। আমি নিজেই পারব।

    আপনার সব রেসিপি আমি পড়ি, আর মনে মনে খাই, বিভিন্ন অপারগতায় কখনো রান্না করতে পারি নাই। আর কখনো কিছু লিখিও নাই আগে। আমাকেও কিন্তু একজন বন্ধু মনে করবেন।

    Like

    • ধন্যবাদ মাহিন ভাই, আপনার কমেন্ট পেয়ে ধন্য হলাম। আপনি আমার রেসিপি পোষ্ট গুলো দেখেন বলে খুশি হলাম। গল্পের ছলে রান্নার কলা কৌশল বলে দেয়ার একটা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমি। আপনাদের ভাল লাগলে, খুশি হই।

      মাহিন ভাই, রান্না কিন্তু একটা চমৎকার ব্যাপার। কষ্টের কাজ হলেও একবার যদি নিজের করে নেয়া যায় তবে আর চিন্তা থাকে না।

      মাঝে মাঝে কয়েকটা রান্না করে দেখুন। প্রথম প্রথম একটু ভাল না হলেও পরে দেখবেন রান্নায় কত মজা! এটাও একটা নেশা!

      রান্না করে প্রিয়জনদের খাওয়ানো কত আনন্দের কাজ তা বলে বুঝাতে পারব না।

      অবশ্যই।

      Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]