কমলাপুরের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই! সে সব দিন গুলো নিয়ে লিখতে গেলে সাগরের পানি কালি হলেও কম পড়ে যাবে! কত স্মৃতি, কত কথা। প্রায় টানা ২০ (১০ বছর আমি টানা ছিলাম) বছর আমরা কমলাপুর কলোনির ভিতর এবং কমলাপুর ৬নং বাস স্ট্যান্ড মোড়ে ক্যাফে ঝিলে (আমরা যাকে বাবুর হোটেল বলি) আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়েছি। ইস, কি সময় ছিল সেটা। চিন্তা ভাবনা নেই! আহ… তবে সব কিছু আগের মতই আছে, মানুষ ও গিঞ্জি বেড়েছে কয়েক শত গুন! বাবুর হোটেল এখনো আছে, এবারের রোজায় রিইনোভেশন চলছে তাই বন্ধ দেখলাম।
কমলাপুর রেলস্টেশন। ০২/০৮/২০১২ তোলা ছবি। এখন আর কমলাপুর রেলস্টেশন চোখে লাগে না। আগের সেই সৌন্দর্য্য নেই, কেমন যেন বুড়িয়ে গেছে।
আমরা সবাই যে ভীষণ ব্যস্ত দেশ বিদেশে! যে জীবনে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একসাথে আড্ডা দেয়া আমাদের অভ্যাস ছিল, এখন সবাই যে যার হালে! চাকুরী, ব্যবসা, পরিবার সন্তান নিয়ে আমরা সবাই যে যার যার জায়গায় ভীষণ ব্যস্ত। তবে মজার কথা হচ্ছে, বছরে এখনো একদিন মানে রোজার মাসে এইটা ইফতারে সবাই চেষ্টা করি এক সাথে ইফতার করতে (যারা ঢাকায় থাকে, এবং আসতে পারে)। এটা আমি মোটামুটি দাঁড়া করে ফেলতে পেরেছি যে, যে যাই করো রোজায় একদিন ইফতারে কমলাপুরে আসতেই হবে। তার পরও দুই একজন মিস করে ফেলে! এবারের ইফতার হয়েছিল গত বৃহস্প্রতিবার (০২/০৮/২০১২)।
ছবি কথা বলে। এমন প্রাণবন্ত আড্ডা। সালটা আমি ঠিক বলতে পারব না। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ এর মধ্য হবে।
ঈদের পরদিন সন্ধ্যায় দল বেঁধে (যারা হাজির থাকত) স্টুডিওতে ছবি তোলা আমাদের একটা হবি ছিল। অনেক বছরের ছবি আমার কাছে নেই। নিশ্চয় কারে কাছে আছেই।
সবাই আমরা বুড়িয়ে/মুটিয়ে যাচ্ছি! এখনো আড্ডা কি প্রান্তবন্ত। কথা যেন ফুরায় না।
ইফতার নিয়ে অপেক্ষা। ইফতারে এখন আর ভাজাভুজি কেহ খেতে চায় না। মুড়ি, বুট, পেঁয়াজু আর চলছে না।
আজাদ এসেছিল ওর শাশুড়ির দেয়া টকটকে লাল পাঞ্জাবী পরে! খাবারের প্রতি ওর আগ্রহ আগেও যেমন ছিল এখনো তেমন আছে!
খাদ্যমুল্যের দাম কি হারে অন্য জিনিষের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তা ইফতারের এই প্লেট দেখেই বুঝা যায়। এক গ্লাস পানীয় নিয়ে এই রকম প্লেট গত বছর ছিল ১৬০ টাকা, এবার ধরেছেন ১৯০ টাকা। তদুপরি পরিমাণ/সাইজ কমেছে গত বছরের তুলনায়!
এটা হচ্ছে রিয়েল আড্ডা। কমলাপুরের রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে। আওয়ামীলীগ বিএনপি নিয়ে অল্পের জন্য একটা একটারে! হা হা হা…। ওরা এখনো আগের মতই রয়ে গেছে! এই ঝগড়া এই ভাব! ছেলে মেয়ের বাপ হয়েও এখনো যেন স্কুল/কলেজ ছাত্র!
এমন কফি না হলে কি আড্ডা জমে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, কয়েকজনকে দেখলাম এই কফি না খেয়ে ওরা রাস্তার ধারের টং দোকানের চা খাচ্ছে! একদম আগের মতই!
আমাদের আড্ডা চলবেই। হউক না বছরে একদিন, কংবা কয়েক ঘণ্টা!
মজার বিষয় হচ্ছে, আমার স্কুল/কলেজের এই বন্ধুরা এখনো জানে না যে, আমি ভাল রান্না করা শিখে গেছি! জানলে ওরা খবর করে ফেলত!
এদিকে ভাগ্যিস ওরা আবার কেহ বাংলা ব্লগও পড়ে না! এই পোষ্ট ওদের কারো চোখে পড়বে বলে মনে হয় না।
LikeLike
খুব ভালো লাগলো আপনাদের এই আড্ডা দেখে। বন্ধু পাওয়া এবং ধরে রাখা অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। আপনি ভাগ্যবান।
বন্ধু বলতে প্রকৃত যা বোঝায়, আমার তা নেই। আমার সহপাঠি, অনুরাগী আছে। বন্ধু আছে কি? মনে হয় নেই।
ভালো থাকুক বন্ধুত্তা।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ আপা, হা হা হা… আপনি একটু বেশি আধ্যত্বিক দিকে চলে গেলেন! দুনিয়াতে আসলে কে কার বন্ধু! হা হা হা… দুই দিনের এই দুনিয়া! তবে স্কুল জীবনের এই বন্ধুরা এখনো আছে স্বার্থহীন ভাবেই। লেনদেন করলেই বুঝা যায়, বন্ধুত্ব কি জিনিষ। সবাই সবাইকে জানি বলে এই বন্ধুত্ব ওখনো অটুট, হয়ত থাকবে আজীবন। তবে আমি যতদিন আছি (এটা গর্ব নয়) ততদিন ওদের ডেকেই যাব, কেহ আসুক আর নাই বা আসুক।
আমরা সবাই কিন্তু এক স্কুলের ছাত্র ছিলাম না! আড্ডা, কোচিং, খেলাধুলাতেই আমাদের এঁকে অপরের পরিচয়।
আমাদের ওয়াইফদের (তাদের না ভুলে) নিয়েও বেশ কয়েকবার এমন আড্ডার ব্যবস্থা করা হয়েছিল! তবে তাতে সমস্যা লেগে যাবার সমূহ সম্ভাবনা যাচ্ছিলো! তাই, ওসব বাদ হয়ে গেছে! হা হা হা।।
আমাদের দেশের মেয়েরা/মায়েরা এখনো সেই সুযোগ পাচ্ছে না, কথা সত্য।
LikeLike
আহা! কী চমৎকার সময় না পার করে এলেন! এখন শুধু স্মৃতিই হয়ে থাকবে আপনাদের মধুর মূহুর্তগুলো।
বন্ধুদের সাথে তোলা প্রথম ছবিটিতে (যেটি ১৯৮৮-৯০’এর মধ্যে হবে বলেছিলেন) আপনাকে চিনতে পেরেছি আমি। বসা অবস্থায় সবার পিছনের জন আপনি। 😀
LikeLiked by 1 person
হা হা হা… রুমান ভাই, আমরা মোটামুটি শেষের পথে। আর বেশি দিন বাকী নাই! আমাদের অনেকের ছেলে মেয়ে বিবাহ দিয়ে দিয়েছি…
হা, সঠিক। আমি কিন্তু ছোট বেলায় হেভি হ্যান্ডস্যাম ছিলাম! তবে সারা জীবন সাইড হিরো হয়ে পার করে দিলাম।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
LikeLike
তাহলে আপনার বর্তমান প্রোফাইল ছবিটা অনেক আগের? 😀
LikeLike
‘খেলার সাথীরা কোথা আজ তারা ভুলিয়াও গেছি নাম …!’ এমন বন্ধু থাকা ভাগ্যের ব্যাপার! আপনি সৌভাগ্যবান! আপনার অনেক কিছুকেই আমি হিংসা করি, তার মধ্যে অন্যতম এই বন্ধুভাগ্য!!
হিসাব করে দেখলে আমার কোন বন্ধুই নেই! অথচ কী আশ্চর্য, এমন সময় গেছে, যখন শুভানুধ্যায়ীদের ভিড় অনেক সময়ই বিরক্তির কারণ হতো! কেমন কেমন করে সব বন্ধু আজ দূরে সরে গেছে, “যখন যাহারে জড়ায়ে ধরেছি, সেই চলে গেছে দূরে!”
শুভ কামনা।
LikeLiked by 1 person
হুদা ভাই, আপনার সাথে একমত।
আমার বাবাও অনেক বন্ধু বতসল্য ছিলেন। তার শেষ জীবনে এমনি দেখেছি। আমার এমন হবে হয়ত। তবে যতদিন শারীরিক ভাবে সুস্থ্য থাকব তত দিন আমাদের আড্ডা দেবার জায়গা থাকবে, বিশেষ করে বেইলী রোডে! এখানে আমার কিছু স্থায়ী ফেন্ড আছে, যারা আর দুনিয়ার কোথায়ও যাবে না!
তবে অফিস কলিগ কখনো বন্ধু হয় না! খেয়াল করে দেখুন। অনেকে অফিস কলিগকে বন্ধু মনে করে ধোঁকায় পড়েন। অফিসের বাইরে নিজের যোগ্যতায় বন্ধু গড়ে নিতে হয়।
আমি আছি আপনার বন্ধু হিসাবে। আমাকে ভুলে যাবেন না।
LikeLike
আপনার আন্তরিকতাটুকু আমাকে ছুঁয়ে গেল!
অনেক কথা লিখতে ইচ্ছে করছে- আবার আলসেমী সে ইচ্ছাকে দমিয়ে দিচ্ছে, থাক আজ।
ভালো থাকুন।
LikeLike
ব্যাপার না হুদা ভাই, আপনি সময় করেই লিখুন। তবে এক জায়গাতে স্থায়ী না হলে বন্ধু পাওয়া মুস্কিল।
আজ বন্ধু দিবসে আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই।
LikeLike
একটা সময় ছিল, যখন আমার বন্ধু ভাগ্যে আমি নিজেই নিজেকে ঈর্ষা করতাম! না চাইতেই জুটে যেত বন্ধু আর গুণগ্রাহীদের দল!! আর সে কারণেই হয়তো বন্ধুত্বকে জিইয়ে রাখতে শেখা হয়নি আমার। শেষ পর্যন্ত আমার গাফিলতিতেই হয়তো আমি আমার সকল বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছি। শুধু পাওয়াকেই আপন ভাবলে বন্ধু হওয়া যায় না, দেওয়াকেও আপন ভাবতে হয়। আমার হয়তো সে গুণ ছিল না বা এখনও নেই। আমি পাই যত, হারাই তার চেয়ে বেশি!!!
অতি আপন রক্তের সম্পর্কিতদের চাইতেও বন্ধুরা আপন, শেষ পর্যন্ত এই আমার উপলব্ধি।
LikeLike
হুদা ভাই, আপনি ঠিক বলেছেন। এটা ঠিক যে বন্ধুত্ব রক্ষায় সব সময় নিজকেই এগিয়ে থাকতে হয়। আপনি খবর না নিলে আপনাকে কে খবর রাখবে। তবে এটাও সত্য যে, বন্ধুদের মধ্যে কার সাথে আপনি কি আচরণ করবেন, কাকে ঘরে নেবেন তাও আপনাকে দেখে নিতে হবে। মোটকথা আপনি যা বলেছেন, বন্ধুত্ব জিইয়ে রাখা না রাখার কাজটা নিজকেই করতে হয়।
এই জীবনে বন্ধুদের দিয়ে যে উপকার পেয়েছি, তা বলে শেষ করা যাবে না। তবে কিছু কিছু খারাপ বন্ধুর জন্য অনেক কিছু হারিয়েছিও বটে! টাকা কিংবা অন্য কিছু! তার পরো বন্ধু থাকা ভাল।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
খুব মজা পেলাম আপনার লেখাটা পড়ে। সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছি পুরান আমলের ছবির সাথে বর্তমানের ছবি মিলিয়ে।
আপনার একটা কথার সাথে আমি একমত। অফিসের কলিগেরা কখনো বন্ধু হতে পারে না।
ভালো থাকুন খুব আর বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা রইলো।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ নিয়াজ ভাই।
আমি কিন্তু আগে দেখতে বেশ ছিলাম। মাথায় টাক ছিল না, পেটে এত চর্বি ছিল না! কোথায় যে যাচ্ছি, বুঝতে পারছি না।
আজ বন্ধু দিবসে আপনাকে জানাই শুভেচ্ছা। আশা করি আমাদের বন্ধুত্ব আরো সুদৃঢ় হবে আগামীতে।
ভাল থাকুন।
LikeLike
অনেক ভাল লাগার একটি পোস্ট। এমন সব বন্ধুত্ব দেখতে সত্যি অনেক ভাল লাগে। আজীবন অটুট থাকুক এই বন্ধুত্ব, আড্ডা, সবকিছু। লেখা আর ছবিগুলো অনেক ভাল লাগলো সাহাদাত ভাই।
LikeLiked by 1 person
দাইফ ভাই, আপনাকেও ভুলে থাকা মুস্কিল। দেখা না হয়েও আপনি আমার ভাল বন্ধু। আশা করি আমাদের এই বন্ধুত্বও আজীবন টিকে থাকবে।
শুভেচ্ছা।
LikeLike
অবশ্যই সাহাদাত ভাই।
থাকবে এই বন্ধুত্ব সব সময়।
ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা রইল অনেক।
LikeLike
বন্ধুতা নিয়ে কী আর বলব? আমি তো এখনও আপনার ঐ ফটোর জমানাতেই আছি! (একটু ঈর্ষা খুঁচিয়ে দিলাম) এখনও প্রায়দিন রাস্তার মোড়ে টং এর চা-বিড়ি সাথে দোস্ত-আড্ডা … সবই চলছে। (ঈর্ষাকে আরেকটু উস্কে দিলাম)
তবে আমি সৌভাগ্যবান … কর্মক্ষেত্রে গিয়ে আমি কিছু বন্ধু পেয়েছি, যাদের তুলনা হয় না। আবার ব্লগে এসেও পেয়ে গেলাম অনেক অনেক বন্ধু … নাহ্, আমার বন্ধু-ভাগ্যটা ভালই মনে হচ্ছে।
হা হা হা … তবে আমার নিজস্ব অবজার্ভেশন হল, বন্ধুর কাছ থেকে এক্সপেক্টেশান যত কম থাকে, বন্ধুতা তত দীর্ঘদিন ভাল থাকে।
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ ফয়সাল ভাই, আপনি যে চরম আড্ডাবাজ এটা আমি বুঝেছিলাম আপনার আমাকে খুঁজে বের করা দেখে!
বন্ধুর কাছ থেকে এক্সপেক্টেশান যত কম থাকে, বন্ধুতা তত দীর্ঘদিন ভাল থাকে। – এটা ১০০ ভাগ সত্য।
সাথে একটা যোগ দিতে পারেন – টাকা পয়সার লেনদেন না করাই ভাল, তবে হেল্প চলতে পারে সব সময়।
চট্রগ্রাম গেলে আপনার সাথে আড্ডা দিবো।
LikeLike
ভোর ৫টায় শুনশান পরিবেশে পড়লাম… খুব খুব নস্টালজিক, যখন হলে চলে যাই তখন ঢাকার লাইফকে কি যে মিস করি… 😦
যাই হোক, খুব ভালো লাগলো
LikeLiked by 1 person
ধন্যবাদ সুপ্ত ভায়া। আপনি এখন কোথায় থাকেন, কি করেন। জানলে খুশি হব। আপনার জন্য শুভেচ্ছা ও ভালবাসা থাকল।
আসলে আড্ডা ছাড়া আর কি আছে এই জীবনে? কোথায় কোথায় আড্ডা দিতেন?
আশা করি মাঝে মাঝে এখানে এসে আড্ডা দিয়ে যাবেন।
LikeLike
পিংব্যাকঃ আড্ডাঃ কমলাপুরের ইফতার ২০১৪ইং (চেনামুখ) | রান্নাঘর (গল্প ও রান্না)