গ্যালারি

রেসিপিঃ মুরগী আলু ঝোল


আমার মায়ের অনেক বড় বড় হাড়ি পাতিল ছিল। তিনি এগুলো কিনতেন এবং আমরা এত বড় বড় হাড়ি পাতিল দেখে ওনাকে কত কথাই না বলতাম! আমার মাকে কখনো অন্য কারো কাছে নানা অনুষ্ঠানের খাবার দাবারে, ঈদে চান্দে কখনো কারো কাছে হাডি পাতিল চাইতে দেখি নাই। এই সকল হাড়ি পাতিল এখন আমাদের গ্রামের বাড়িতে আছে। আমরা ভাইবোনরা গেলে এই সকল হাড়িতেই রান্না হয়। মোটামুটি প্রতি বেলা গোটা ৪০ জন করে হয়ই! আম্মা প্রবাসে আছেন আর আমরা তার হাড়িতে রান্না করি, ফোনে তিনি আগেই বলে দেন। সব ধুয়ে মুছে আবার জায়গায় রেখে দিস! গোটা বিশেক বড় হাড়ি পাতিল হবেই।

এখন নিজে সংসারী হয়ে দেখি আমার ব্যাটারীর অবস্থাও তাই! খালি বড় বড় হাড়ি পাতিল কিনতে চায়! অবশ্য অনেক হাড়ি পাতিল ইত্ত্যিমধ্যে বেশ কিছু কিনেই ফেলেছেন এবং সিরিয়াল নাম্বার দিয়ে ফেলেছেন। যুক্তি একটাই, দরকার লাগবে।

আমি ও আমার ব্যাটারী আমরা রান্না করে সবাইকে খাওয়াতে ভালবাসি (যদিও এখন দ্রব্যমুলের কারনে এটা কম করি)। তবে বাড়ী গেলে কোন কথাই নাই। সবাইকে নিয়ে বসে পড়ি। বাড়ীতে আমার চাচাত ভাইবোন, চাচা চাচীরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করেন। বড় বা বেশি রান্নার ব্যাপারে আমাদেরও কোন সমস্যা নাই। বিশেষ করে আমার ব্যাটারীর। তিনি এই সব কাজে সানন্দে লেগে পড়েন। আমি থাকি পাশেই!

এই রকম একটা রান্না দেখুন। গোটা ৪০জনের জন্য। মুরগী আলু ঝোল ।

প্রস্তুত প্রণালীঃ

আদা রসুন বেটে আগেই রেডি। ভুলে যাবার আগেই দারুচিনি এলাচি রেখে দেয়া।


হাড়িতে তেল গরম করে আদা রসুন ও গরম মসলা ভেজে নেয়া। লবণ দেয়া হয়েছিল।


মরিচ হলুদ ধনিয়া জিরা দিয়ে ভাল করে কষিয়ে তেল উপরে উঠিয়ে নেয়া।


হাফ কেজি টমেটো এবং কিছু কাঁচা মরিচ দিয়ে তিন কাপ পানি দিয়ে ভাল করে ঝোল বানিয়ে নেয়া।


আট কেজি মুরগীর মাংস ভাল করে ধুয়ে নেয়া হয়েছিল তা দিয়ে দেয়া হল।


ভাল করে মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল চলছেই। মাঝে মাঝে উল্টে আবারো নাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।


কেজি দুয়েক আলু।


আবারো গরম পানি দিয়ে কিছু ঝোল।


জ্বাল চলছেই।


বিদ্যুৎ চলে গেল! ঘণ্টা খানেক থাকবে না…। এটা এই দেশে নুতন কিছু না, এই নিজেই জীবন। আফসোস, সরকার এখনো বিদ্যুতের আসা যাবার একটা শিডিউল বানাতে পারে নাই! সেইম…।


মাংস মজে গেল কিনা ভাল করে দেখে নিন।


অন্য একটা হাড়িতে কেজি খানেক পেঁয়াজ হালকা তেলে ভেজে নিন।


এবার মাংসের হাড়িতে পেঁয়াজ দিয়ে দিন।


শেষ ফাইন্যাল লবণ দেখুন। এমন একটা চোহারা দাঁড়িয়ে যাবে।


ব্যস হয়ে গেল মুরগী আলু ঝোল। বড় বোলে  পরিবেশন করা যেতে পারে।


পরিবেশনায় বা কাতিমদারীতে অভিজ্ঞতা একটু জরুরী। শিশুদের, যুবকদের এবং বৃদ্বদের জন্য খেয়াল করে পরিবেশন করতে বা দিতে হবে। এই ধরনের বড় খাবার দাবারের খাবারের অপচয়ে শেষে খাবারের টান পড়ে যেতে পারে (তখন খাবার না পেয়ে কেহ রেগে/বেজার হয়ে যেতে পারে)। সুতারাং দেখে শুনে বুঝে, আল্লাহর নামে! যাতে যার যা পেটে ধরে সে তাই খেতে পারে! নিশ্চয় যার রিজিকে যা আছে সে তাই খাবে!

বুদ্দির কারনে আমরা এখনো এমন সমস্যায় পড়ি নাই। আমার ব্যাটারী মাথা গুনে সব সময় আরো গোটা পাঁচেক মাথা এড করে যোগফল বলেন! বাজার হয় সেই মোতাবেক! আমি মাঝে মাঝে একটু গ্যান গ্যান করি, কিন্তু কে শুনে কার কথা! সবার খাওয়া শেষ হলেই (কারো কারো বাটিতে ঘরেও পৌঁছে দিতে হয়) আমি ও আমার ব্যাটারী খেতে বসি, আমরা হাসি। যে যার ভূমিকায়!

চলে আমাদের গল্প, এই আমাদের জীবন!

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন

16 responses to “রেসিপিঃ মুরগী আলু ঝোল

  1. চোখে বোধহয় ভালো দেখতে পাচ্ছি না আজকাল! ৪০ জনের জন্য এই রান্নায় কয়টা বা কয় কেজি মুরগী দেওয়া হলো খুঁজেই পেলাম না।
    অনেক বেশি রান্না একত্রে খুব স্বাদের হয়। কবে সবাই যাবেন বাড়িতে, সে কথাই ভাবি শুধু।

    Liked by 1 person

    • হুদা ভাই, আমার যতদূর মনে আছে ৭ টা মুরগী কোনা হয়েছিল। ৯ কেজি বা তারও বেশি। তাই আমি অনুমান করে ৮ কেজি লিখে দিয়েছি।

      ৪০ জনে মধ্যে গোটা দশেকের বয়স ১০ বছরের নীচে ছিল, আমার ছেলের বয়সী (অবশ্য ৬ এর নীচে কেহ ছিল না)।

      আমি ঈদে বাড়ী যাব ভাবছি কিন্তু টাকার কথা ভেবে আবার চুপ মেরে যাচ্ছি! গাড়ী ভাড়া সহ এত খরচ সইতে পারব বলে মনে হয় না।

      শুভেচ্ছা।

      Liked by 1 person

  2. পিঁয়াজটা পরে কেনো দেয়া হলো?
    আমরা তো সাধারনত আগেই পিঁয়াজটা দেই। পরে বেরেস্তার পিঁয়াজ ভেজে দেই।

    আমার সংগ্রহেও শ্বশুরের আমলের অনেক বড় বড় হাড়ি আছে। আমি তা থেকে আমার দুই জা, ও মেয়েকেও দিয়েছি।

    Liked by 1 person

    • রান্নাতো বোন, এটা আমার জিজ্ঞাসা ছিলো। আমার ব্যাটারী জানালেন, ব্যাপার না। আগুন সব চুরমার করে দেবে। তবে স্বাদে কোন সমস্যা হয় নাই।

      আমার আম্মার পাতিল গুলো মনে হয় না কাউকে দেবেন! হা হা হা… আমাদেরও অনেক হয়ে গেছে!

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. বাহ বাহ বেশ! আলো চলে যাবার ঘটনাটা হাসির খোরাক দিল। আর আদা-রশুন মশলা কষানোর ছবি দারুন!! নিজেই প্রতিদিনের রান্না করে আমি ক্লান্ত, একবার আমায় আপনাদের রান্না খাওয়াবেন?

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ বোন। আসলেই রান্না বেশ পরিশ্রমের কাজ, এটা অনেকেই বুঝতে চান না। এই না বুঝতে পারার বিষয়টা একটা অন্যায়। যারা আমাদের জন্য রান্না করে তাদের বিশেষ সন্মান ও গুরুত্ব দেয়া উচিত।

      আপনাকে শুভেচ্ছা। অবশ্যই।

      Like

  4. আমরা হলাম পুরোনো ঢাকার (যদিও এখন সেখানে থাকিনা কিন্তু বাড়ি আছে এখনও)। তাই বড় বড় ডেকচি, পাতিল সব ছোট থেকেই দেখে অভ্যস্ত। আর যৌথ পরিবারের সুবাদে রান্না ঘরে ছোট পাতিলই কম থাকে, হা হা হা।

    চমৎকার লাগলো পোস্টটি আর লেখনি। আপনি এত সুন্দর করে গল্প বলতে বলতে রেসিপি দিয়ে দিন যে, একটি পোস্ট বারবার পড়তে ইচ্ছে করে। ধন্যবাদ আর শুভকামনা রইল সাহাদাত ভাই।

    Like

  5. আমার প্রিয় একটা রেসিপি। 🙂

    Like

  6. আজকে সহ তিনবার রান্না করলাম। আমার অত্যন্ত প্রিয় একটা রেসিপি। এবং প্রিয় রেসিপি গুলা নিজেই রান্না করি।
    আপনার পোষ্ট গুলা আমার খ্যাতি বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ জিয়া ভাই। আপনার কমেন্ট পেয়ে আমরা ধন্য হলাম। আসলে রান্নায় ভালবাসা থাকলেই চলে! হা হা হা…

      আশা করি একদিন আপনিও আমাদের মত সবার/পরিবারের কাছে সেরা হয়ে উঠবেন।

      একটা গোপন কথা বলি, আমি রান্না শেখার পর/চেষ্টা থেকে, আমার ব্যাটারীর সাথে আর একটা কথা কাটাকাটি হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। রান্নাঘরে আমাদের গল্প হয়ে যায় এবং বেশ মানসিক দুরত্ব কমে আমরা এখন বলতে পারি, উই মেড ফর ইচ আদার! হা হা হা…

      আপনার জন্য আমাদের শুভেচ্ছা থাকল…। আশা করি আমাদের সাথে থাকবেন এবং মাঝে মাঝে আমাদের দেখে যাবেন। আগামীতে আরো অনেক অনেক রান্না নিয়ে আমরা আসছি।

      ভাল থাকুন।

      Like

  7. ফাতেমা আক্তার মাইমুনা

    আমি উপরের ছবিগুলা দেখতে পারছিনা কিভাবে দেখতে পারব আমাকে জানাবেন দয়া করে

    Liked by 1 person

  8. এত সহজে যে এই রান্না টা বুঝিয়ে দিবেন চিন্তাই করতে পারিনি । আর আপনার মত স্টেপ বাই স্টেপ রান্না অন্য কোথাও দেখিনি । কাজে লাগছে বিশেষ করে ছেলেদের জন্য ।
    অনেক অনেক ভালো থাকবেন ।

    ধন্যবাদ ।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ নাসিম ভাই।
      আমরা আছি যারা নুতন রান্না করেন তাদের সাথেই। আমরা চাই, রান্নার ছি গুলো দেখেই যেন কেহ সহজে রান্না করে ফেলতে পারেন। আর যারা পুরাতন রান্না করেন, তাদের একটু মনে করিয়ে দিতে চাই মাত্র। শুভেচ্ছা নিন।
      (দেরীতে উত্তরের জন্য সরি। কমেন্ট হয়ত আমার চোখে পড়ে নাই।)

      Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]