গ্যালারি

রেসিপিঃ তেলাপিয়া বেক


তেলাপিয়া মাছ আমাদের শহুরে জীবনে খাবারের তালিকায় জকিয়ে বসেছে। কারন মনে হয় বেশ কয়েকটা! ১) দামে সস্থা ২) কাঁটা কম ৩) খেতে সুস্বাদু ৪) শিশুরা পছন্দ করে ৫) অনেক প্রকারের রান্না করা যায়। এ ছাড়া আরো অনেক কারন থাকতে পারে! গত কিছুদিন আগে টিভিতে চ্যানেল ফক্সে দেখলাম স্পেনেও তেলাপিয়া আছে! তারাও বেশ মজা করে এই তেলাপিয়া খেয়ে থাকে। তেলাপিয়া দিয়ে আমি কয়েকটা রেসিপি ইত্যিমধ্যেই দেখিয়েছি। তেলাপিয়া ফ্রাই, তেলাপিয়া কাবাব ইত্যাদি। আগামীতে আরো কিছু দেখানোর চেষ্টা করব।

গত শুক্রবার দুপুরে নামাজের আগে ও পরে তেলাপিয়া দিয়ে এমনি একটা আইটেম করেছিলাম আমি ও আমার ব্যাটারী! হাতে ছিল আমাদের দেশীয় সবজি আলু ও বরবটি যা এই তেলাপিয়ার সাথে বেক করা হয়েছিল ইলেকট্রিক ওভেনে! বেশ মজাদার হয়েছিল। চলুন দেখে ফেলি।

প্রণালীঃ (ছবির ধারাবাহিকতা দেখেই আশা করি আপনারা বুঝে যাবেন)

গোটা তেলাপিয়া ভাল করে পরিষ্কার ও ধুয়ে নিন। আজকাল বাজারে বেশ বড় তেলাপিয়া পাওয়া যাচ্ছে।


মশলা পাতিঃ সরিষার তেল, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, জিরা, টমেটো সস, ধনিয়া পাতা, কাঁচা মরিচ, গুড়া মরিচ, হলুদ গুড়া, লেবুর রস ও রাইন্ট (লেবুর খোসা, ছবিতে দেখুন) ও লবণ। (রেসিপিটা টিভি চ্যানেল থেকে নেয়া)। ওরা অলিভ ওয়েল দিয়ে ছিল! কিন্তু তা পাব কোথায়? সব কিছু সামান্য করে নিয়ে ভাল করে গ্রাইন্ড করে একটা মশলা পেস্ট বানিয়ে ফেলেছিলাম। যার অর্ধেক তেলাপিয়াতে এবং অন্য অর্ধেক সবজিতে ব্যবহার করেছিলাম। স্পেনের টিভি অবশ্য আমাদের মত এমন সবজি ব্যবহার করে নাই! হা হা হা…


মশলা মেখে ঘণ্টা খানেক নরমাল ফ্রিজে রেখে দিন। গায়ে মশলা লেগে যাক!


বাসায় ছিল কিছু বরবটি, ছিল কিছু কপ্সিক্যাম (যা এদিক ওদিক গড়াগড়ি খাচ্ছিলো)। আমি নিয়েছি কিছু আলু ও পেঁয়াজ। প্রথমে আলু এবং পরে অন্যান্য সবজি সামান্য লবণ দিয়ে সিদ্ব করে নিলাম।


পানি ঝরিয়ে সিদ্ব সবজিতে মশলা মেখে নিলাম। মশলার ঘ্রাণ ছিল মন মাতানো।


তেলাপিয়াটা মিনিট কয়েক তাওয়ায় ভেজে নিলাম। এটা না করলেও চলে তবে আমরা এইজন্য করেছি যেন তেলাপিয়ার চামড়ায় হলুদ আভা আসে…।


তার পর ইলেকট্রিক ওভেনের জন্য তেলাপিয়া ও সবজি গুলো সাজিয়ে নিলাম।


ডাইরেক্ট ২০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসে মিনিট কুড়ির জন্য ওভেনে প্রবেশ।


ওয়াও!


কি চমৎকার রং এবং ঘ্রাণ!


এত সুন্দর বেকিং। নরম তুলতুলে তেলাপিয়া। দেশীয় সবজি গুলোতে নুতন স্বাদ!


শুক্রবারে নামাজ পড়ে আরো ঘণ্টা খানেক বাদে খেতে বসা! পেট চো চো, মাথা ভো ভো!


তিন জনেই প্রায় এক কেজি ওজনের তেলাপিয়া সাবাড়!

এটুকুই বলব, একবার বানিয়ে দেখতে পারেন। এটা নাই ওটা নাই চিন্তা না করে, যা আছে তা দিয়েই লেগে পড়ুন। কিছু একটা দাঁড়িয়ে যাবেই! মশলাপাতি ও সরিষার তেলের জন্য খাবারে আলাদা একটা আনন্দ এসেছিল। খাবারের বৈচিত্র্য বেশ উপভোগ্য!

কৃতজ্ঞতাঃ মানসুরা হোসেন

তেলাপিয়ার আরো দুইটা আইটেমের রেসিপি দেখতে পারেন
রেসিপিঃ ফিস কাবাব তেলাপিয়া দিয়ে (ছোট সোনামনিদের জন্য)
তেলাপিয়া মাছ ভাজা

21 responses to “রেসিপিঃ তেলাপিয়া বেক

  1. এই রেসিপি দেখে আমারই তো মাথা ভো ভো আর পেট চো চো করছে। ( যদিও এই মাত্র রুটি আর সবজি দিয়ে রাতের খাবার সেরে এলাম )
    বরবটি কুম্ভকর্ণ খায়না। আর ওভেন তো এখন ভয়েই চালাইনা। মাসের শেষে বিশাল অঙ্কের ইলেক্ট্রিক বিলের কথা মাথায় রেখে।
    যা আছে কপালে—– এটা ট্রাই করবোই ইনশাল্লাহ!!!!

    Like

    • ধন্যবাদ বোন।
      হা, আমরাও ওভেনটা অনেকদিন ধরে তুলে রেখেছিলাম! অনেক বেশী বিল আসে… গত কিছুদিন আগে থেকে আবার নীচে নামিয়ে ব্যবহার করছি এবং সেটা আমার উৎসাহেই! বিল আমাকেই দিতে হবে…। হা হা হা।।

      বলেন কি! দুলাভাইয়ের খবর করে ফেলব!

      Like

  2. তেলাপিয়া রান্না করলে খেতে পারি না, কেমন যেন একটা গন্ধ লাগে! তবে বেকড তেলাপিয়া নিশ্চয়ই মুখরোচক হবে।

    Like

    • আমার রান্নাতো বোনের কথা মনে রাখবেন… তেলাপিয়া মাছ হলুদ ও ভিনিগার/লেবুর রস মাখিয়ে মিনিট ১৫ রেখে ধুয়ে নিলে গন্ধ থাকেনা। তবে আমি কখনো কখনো পাই আবার কখনো পাই না!

      মজাদার না হলে কি এত সহজে ফিনিশ করে ফেলা যায়!

      শুভেচ্ছা।

      Like

  3. ছোট বেলায় টমেটো দিয়ে কম ঝোলে রান্না করা তেলাপিয়া খেতে পছন্দ করতাম।
    এরপর হঠাৎ একদিন তেলাপিয়ার গন্ধটা সহ্য হচ্ছিল না।
    গন্ধের কারণে কৈ মাছ, হাঁস ও কবুতর খেতে পারি না। আগে খেতাম।

    আপনার রান্না দেখে লোভনীয় মনে হচ্ছে।

    Like

    • হা, এটা হতে পারে। আজকাল নানা ধরনের তেলাপিয়া চাষ হয়। মাছের খাবারেও অনেক পরিবর্তন এসেছে! এই অভিযোগটা আছে। ধানমণ্ডি লেক থেকে ধরা বিরাট বিরাট তেলাপিয়া কেহ খেতে পারে নাই! সবাই বলছিল ঘাসের গন্ধ নাকি!

      যাই হোক, তেলাপিয়া ভাল চাই। আমি খেতে কোন বাজে ঘ্রাণ পাই নাই!

      শুভেচ্ছা।

      Like

  4. তেলাপিয়া মাছ হলুদ ও ভিনিগার/লেবুর রস মাখিয়ে মিনিট ১৫ রেখে ধুয়ে নিলে গন্ধ থাকেনা।

    Like

  5. আহা, দেখেতো খুবই লোভ হচ্ছে 🙂

    তেলাপিয়া মাছ আমার বেশ ভালো লাগে। আমরা নারকেলের দুধ-কারিপাতা-লেবু দিয়ে একটা বেক করি, সবাই খুব চেটেপুটে খায়। একবার করে দেখতে পারেন, ভাল লাগবে আশা করি।
    http://www.sinfulcurry.com/meen-pollichathu-%E2%80%93-roasted-pomfret-steamed-in-a-banana-leaf-a-kerala-delicacy/

    Like

    • ধন্যবাদ রনি ভায়া। বেকিং করলে মাছের স্বাদ আসলেই বেড়ে যায়। আপনার রেসিপিটা অনুমান করতে পারছি… স্বাদ না হয়ে পারবে না… নারকেলের দুধ-কারিপাতা-লেবু, শুনেই কল্পনায় পড়ে গেলাম।

      লিঙ্কে গিয়ে রেসিপিটা/ব্লগ দেখে এলাম। এ যে দেখছি এলাহি কারবার! হা হা হা।। বুক মার্কে থাকল… কাজে লাগবে…

      প্রবাসে আমি ইন্ডিয়ান হোটেল তথা ক্যারেলা হোটেলেই খেতাম!

      লিঙ্কের জন্য শুভেচ্ছা…।

      Like

  6. ভাইয়া, আপনার লেখাগুলা আমার খুবই ভালো লাগে, আগে ভাবতাম রান্না আমারো খুবি পছন্দের এইজন্যই , কিন্তু ভাল করে ভেবে দেখি, আসলে আরেকটা খুব বড় কারণ আছে।

    আপনার লেখায় আমার প্রিয় বাংলাদেশ, পরিবারের প্রিয় মানুষরা, এদেরকে খুব বেশী খুঁজে পাই। এই লেখাতেই যেমন বললেন, শুক্রবারের নামাজের পর খেতে বসা—সাথে সাথেই মনে পড়ল, আমাদের বাসাতেও শুক্রবার দুপুরে একটু ভাল খাওয়া হতো, গোসল টোসল সেরে বাবা ভাই আর আমি নামাজে গেলাম, মা বাসায় রান্না শেষ করে ফেললেন। নামাজ শেষে সবাই একসাথে খেতে বসলাম, ছোট ভাই তখনো বাইরে গল্পে মশগুল, তাকে আবার ডেকে এনে খেতে বসলাম।

    আপনার প্রায় সব লেখাতেই এরকম টুকটাক কথা থাকে—হয়ত গ্রামের বাড়ি নিয়ে, হয়ত আপনার “ব্যাটারী”কে নিয়ে,(আচ্ছা, উনাকে ব্যাটারী বলেন কেন?), হয়ত আপনার বাচ্চাদের নিয়ে, এসব লেখায় আমি নিজেকে আর আমার আব্বাকে, আর সেই ফেলে আসা জীবনটাকে কেন যেন খুব বেশী খুঁজে পাই।

    ভাল থাকবেন, আপনার আর আপনার পরিবারের জন্য শুভেচ্ছা।

    Like

    • ধন্যবাদ রনি ভায়া। আসলে এটাও আমার একটা চেষ্টা। আমি আসলে নেটে আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতে কি কি রান্না হয় এবং আমাদের যারা প্রবাসে কিংবা মেসে থাকে তাদের জন্যই এই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি প্রবাসে সাড়ে ৯ বছর ছিলাম। কখনো নিজে রান্না করি নাই, রান্না কঠিন এবং জানতাম না বলে। আর এইজন্য কত বেলা না খেয়ে ছিলাম! কত কি আবোল তাবোল খেয়েছি! সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়ে যায়। হাতের কাছে কত কি ছিল! আজ সেই দিনের কথা ভাবি।

      আর একটা ব্যাপার আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, সেটা হচ্ছে আমাদের মা, বোন, মেয়ে কিংবা স্ত্রী আমাদের জন্য কত কষ্ট করে রান্না করেন। আমরা ছেলেরা যদি মাঝে মাঝেও রান্নাঘরে যাই তবে অসুবিধা কি! অন্তত সাপ্তাহে একদিন রান্না করে তাদের কিছুটা সস্তি দিতে পারি। আর এই জন্য রান্নার প্রতি ভালবাসা এবং আগ্রহ চাই। আমি সেই আগ্রহটা আনার একটা চেষ্টা করে যাব বাকী জীবন।

      নেটে প্রচুর নানান ব্লগে, নানান কথা লিখেছি (প্রায় ৭০০/৮০০ লিখা হবে), রাজনীতি, কবিতা, গল্প, সমালোচনা সহ কত কথা! রেসিপি পোষ্ট লিখতে গিয়েই মনে হয়েছে, কিছুটা কাজের কাজ করেছি। রেসিপি পোষ্ট আমাকে একটা পরিচিতি দিয়েছে… এটাই হয়ত ভালবাসা। রেসিপি প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের আমার কাছে সব সময়েই ভাল মনে হয়েছে। এরা বিবাদ পছন্দ করে না, শান্ত এবং ভদ্র। হা হা হা…

      ছেলেরা রান্নাঘরে গেলে স্ত্রীর সাথে ভালবাসা বেড়ে যায়! হা হা হা… স্ত্রীর সাথে আরো বেশী সময় কাটে! তবে রান্নাঘরে স্ত্রীর সাথে টিকে থাকাও বেশ কঠিন কাজ! আমি মনে হয় সেই জয়টা করে ফেলেছি…। আমার স্ত্রী আমাকে রান্নাঘরে পেলে খুশি হয় এটা আমি বুঝি। আজকাল তো আমার অডভাইস নিচ্ছেন! হা হা হা… আমি উনাকে ব্যাটারী বলি ভালবেসে, তিনি এটাতে কিছু মনে করেন না, বরঞ্চ মজা করেন! আর আমার ছেলেকে মজা করে ঢাকি বুলেট! সেও হাসে… তবে ওরা এখনো আমাকে কোন নাম দিতে পারে নাই!

      ভালবাসার জয় আছে!

      নেটে এখন যে কোন রান্না খুঁজে সহজেই রান্না করা যায়। কত সহজ হয়ে গেছে। আমার চেষ্টা চলবে…

      শুভেচ্ছা আপনাকে…। আশা করি সাথে থাকবেন…।

      Like

  7. আপনার ছবিগুলো দেখে যেন বেক করা মাছের সেই কড়া ঘ্রাণ নাকে এসে জানান দিলো। বেক করা মাছ সত্যি অনেক পছন্দের আর তুলনামূলকভাবে বেশ কম কষ্ট লাগে তৈরি করতে।

    দুর্দান্ত এক পোস্ট দিয়েছেন সাহাদাত ভাই।

    Like

    • ধন্যবাদ দাইফ ভাই।
      তেলাপিয়া ছাড়া আর অন্য কি মাছ বেক করা যেতে পারে? জানলে জানান… আবার চেষ্টা করি।। বেক করা মাছ আসলেই খেতে বেশ মজাদার।
      শুভেচ্ছা।

      Like

      • বড় মাছ মোটামুটি বেশ কিছুই বেক করা যায়।
        ইলিশ বা রুই মাছ ঠিক এভাবেই মশলা দিয়ে মেখে ফয়েল পেপারে মুড়ে বেক করা যায়, বেশ মজাদার হয়। প্রতি ঈদের পরদিন ছাদে বার-বি-কিউ পার্টি করে থাকি আমরা কাজিনরা মিলে। তখন ইলিশ বা রুই দিয়ে ঠিক এভাবেই বেক করি কয়লার বার-বি-কিউ চুলাতে। তবে মাছ পিস করে নেই মোটামুটি সাইজের করে।

        রূপচাঁদাও একটু বেশি মশলা দিয়ে সাথে পুঁদিনা বাঁটা, ঝাঁল একটু বেশি দিয়ে ফয়েল পেপারে বেক করা যেতে পারে। সেটা বাসমতি চালের পোলাও দিয়ে খেতে অমৃত লাগে।

        Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]