গ্যালারি

রেসিপিঃ চিংড়ী শুঁটকী রান্না (হেভি ঝাল)


মাঝে মাঝে মুখের অবস্থা এমন হয় যে, আর কিছুই ভাল লাগে না। দামী খাবার দাবার দেখলেই পালিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়। বিশেষ করে বয়স যখন ৫০ পেরিয়ে যায়! হা হা হা… কথা কিন্তু সত্য! ছোট বেলায় যে সকল তরু তরকারী দেখলে পালিয়ে যেতাম এখন মনে হয় সেই সব খেয়ে প্রান ভরাই! কত কি যে খেতাম না… পারলে ডেইলি বিবিয়ানী! আর এখন ডেইলি কেন, সাপ্তাহে যদি একদিনও বিরিয়ানী স্বাদে তাতেও মন চলে না! আসলে সবই দুনিয়ার খেলা! এখন মন চায়, এটা সেটা খেতে…।

তবে ছোট বেলা থেকে আমি শুঁটকী মাছ পছন্দ করি। নানান কায়দার রান্না করা শুঁটকী মাছ আছি খেয়েছি। আমার আম্মা শুঁটকী মাচা রান্না করে তুলে রাখতেন, কারন কেহ খেতে চাইত না, তিনি একাই খেতেন কিন্তু আমি তার কাছ থেকে চেয়ে খেতাম। আর সেই থেকে আমার পরানে শুঁটকীর জন্য একটা আলাদা মায়া আছে! বড় মাছ বা ছোট মাছ, যে কোন মাছের শুঁটকী আমার ভাল লাগে…

গত কয়েকদিন আগে রাতে মুখের অবস্থা ভাল যাচ্ছিলো না… সব কিছু কষ কষ লাগছিল। আমার ব্যাটারীকে জানালে তিনি বলেন, ঘরে কিছু চিংড়ী শুঁটকী আছে, চল ঝাল করে রান্না করি… গরম ভাতের সাথে ভাল হবে এবং মুখেও লাগবে। যেই কথা সেই কাজ! নেমে গেলাম… যদিও আমি ঝাল থেকে দূরে থাকতে চাই! (আমার ব্যাটারী প্রায়ই বোম্বাই মরিচ নিয়ে খেতে বসেন। আমি হাসি… বোম্বাই মরিচ ধরে খুটে খুটে খাবার কি স্টাইল! দিলে ভয় ডর নাই!)

উপকরণঃ
– চিংড়ি শুঁটকী (এক কাপ) অন্য যে কোন শুটকীও ব্যবহার করা যেতে পারে।
– দুই টেবিল চামচ রসুন বাটা
– এক টেবিল চামচ আদা বাটা
– হাফ কাপ পেঁয়াজ কুচি
– এক চা চামচ চামচ লাল মরিচ গুড়া (বুঝে শুনে)
– হাফ চা চামচ হলুদ গুড়া
– এক চিমটি গোল মরিচ গুড়া
– কয়েকটা কাঁচা মরিচ
– কিছু ধনিয়া পাতা
– পরিমাণ মত লবণ
– পরিমাণ মত তেল/পানি

প্রণালীঃ

শুঁটকী ভাল করে পানিতে পরিষ্কার করে নিতে হবে।


কড়াইতে তেল গরম করে তাতে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি হাল্কা ভেজে নিন এবং এই সময় সামান্য লবণ দিয়ে দিন। এর পর একে একে রসুন বাটা থেকে শুরু করে সব মশলা দিয়ে ভাল করে কষাতে থাকুন। কাঁচা মরিচ দিয়ে দিন। তেল যেন উপরে উঠে আসে। এর পর হাফ কাপ পানি দিয়ে দিন। ঝোল হয়ে যাবে।। নাড়াতে থাকুন।


শুঁটকী মাছ দিয়ে দিন। এরপর শুধু কষানো। প্রয়োজনে আরো হাফ কাপ পানি দিতে পারেন।


ভাল করে কষান। প্রয়োজনে ঢাকনা দিন।


ঢাকনা উল্টে দেখুন, ধনিয়া পাতা দিন।


ফাইনাল লবণ দেখুন। লাগলে দিন, না লাগলে নাই। এবার আপনার ইচ্ছা ঝোল কমাবেন কতটুকু।


ব্যস হয়ে গেল শুঁটকী রান্না। পরিবেশনের জন্য প্রস্তুত।


মাঝে মাঝে এমন ঝাল না হলে কি চলে! ঝাল টক মিষ্টি – এই তো আমাদের দুই দিনের জীবন!

20 responses to “রেসিপিঃ চিংড়ী শুঁটকী রান্না (হেভি ঝাল)

  1. বিয়ের আগে আমি কোনোদিন শুটকি খাইনি। এখন আমার শুটকি হলে আর কিছুই লাগেনা। আহ! এমন ঝাল ঝাল শুটকি দিয়ে গরম ভাত!! অমৃত!

    Like

  2. চিংড়ি শুটকি খুব ভালো পাই—এইভাবে রান্না করে দেখতে হবে, ছবি দেখেই জিভে জল আসছে 🙂 । বিদেশ বিভুইয়ে থেকে দেশের খাওয়াদাওয়া অনেক মিস করি, তবে এই শুটকীটা বেশ সহজেই পাওয়া যায়, চাইনিজ দোকানে। মিষ্টিকুমড়ার সাথে চিংড়ির শুটকির চচ্চড়ি আমার একটা প্রিয় খাবার.

    Like

  3. চমৎকার পোস্ট!
    চিংড়ির ভর্তা বা চিংড়ি শুটকির ভর্তা খুবি পছন্দের আমার। জিভে জল আনা পোস্টে ভাল লাগা তো থাকবেই। তবে ছবি মিস করেছি সাহাদাত ভাই।

    শুভকামনা রইল!

    Like

  4. আজব তো? প্রথমে বার বার ব্রাউজার রিফ্রেশ দিয়েও ছবি আসছিলো না, ভেবেছিলাম আপনি মনে হয় ছবি দেননি। এখন দেখি সব ঠিক। দুঃখিত প্রথম মন্তব্যে ছবি মিস করেছি বলবার জন্য।

    Like

  5. সপ্তাহে? ওরে বাবা! আমি পাঠক , লেখক নই। মাসে একটা দু’টা লিখবার চেষ্টা থাকে। তবু আপনার কথা মনে থাকবে। শুভকামনা সব সময়ের জন্য।

    Like

    • আমি মনে করি আপনি কবিতা ভাল লিখেন। আপনার কবিতায় ভাব প্রকাশের একটা আলাদা মাত্রা আছে। সুতারাং সপ্তাহে একটা কবিতা… এ আর কি… আশা করি একদিন একটা বিরাট সংগ্রহ দাঁড়িয়ে যাবে।

      আপনি ভাল পাঠক, এটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।

      Like

  6. আমি তো আমার রান্নাতো ভাইএর সব পোস্টেই ভোট দেই। শুটকির পোস্টে ডাবল ভোট দিতে ইচ্ছে করছিলো, কিন্তু সে সুযোগ তো আর নেই। 😀

    আমি আজ কচি ডাটা ( যার পাতাগুলো শাক হিসেবে খেয়েছি) আলু, লইট্যা শুটকি সব একসাথে হাতে মাখিয়ে রান্না করেছি। ভাত খেয়ে উঠার সময় আমার অবস্থা দেখে নাতি ( আজ সে আমাদের সঙ্গে খেলো) জিজ্ঞাসা করে, ” নানাভাই নানু কাঁদছে কানো”? নানাভাই উত্তর দিলেন, ” ঝালে”। নাতির উত্তর– নানু সিনেমায় ইমোশোনাল রোল ভালো করতে পারবে”। :p

    কুম্ভকর্নের গেস্ট্রিকের প্রবলেম খুব বেড়েছে। তাই ঝাল খাওয়া বন্ধ। ভাবীর মত বোম্বাই মরিচ খাওয়াও ছাড়তে হয়েছে। 🙂

    Like

    • হা হা হা… যেমন নানু তেমন নাতি!
      আপনার এই রান্নাটা আমি পুরো অনুমান করতে পেরেছি, চোখের সামনে ভাসছে এবং আমার হাতের কাছে সবই আছে। কয়েকদিনের মধ্যে রান্নাটা করে ফেলব…। তবে আপনার মত ঝাল বেশী দিব না… গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকবার ডাটা কিনেছি…। কিন্তু সময়ের অভাবে রান্না দেখা বা করা হয়ে উঠে নাই।

      আশাকরি কুম্ভভাই আবার ঝাল খাবেন মনের আনন্দে। কুম্ভভাই বোম্বাই মরিচ খেতেন!

      শুভেচ্ছা।

      Like

  7. নতুন একটা রেসিপি পেলাম। এবার ফেনী থেকে চিংড়ি শুটকি পাঠাতে বলিনি বলে আফসোস হচ্ছে। আমরা এটাকে ইচা শুটকি বলি।
    আমার বড় ভাই ও উনার ছোট মেয়ে সামিয়ার খুবই প্রিয় এই শুটকি। আমি ইচা শুটকি টেলে ব্লেন্ডারে গুড়া করে বয়ামে ভরে রাখি। এতে চট করে পেয়াজ, ধনে পাতা, মরিচ আর সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে ভর্তা বানিয়ে ফেলা যায়।

    Like

    • ধন্যবাদ, আপনি আমার পুরানো রান্না গুলো দেখছেন দেখে ভাল লাগছে। প্রথম দিকের রান্না গুলো দেখলে এখন আমারই খারাপ লাগে। তেমন ভাল রান্না হয় নাই। এখঙ্কার রান্না বেশ ভাল হচ্ছে। নিজেই বুঝতে পারছি।

      ইচা শুঁটকীর গুড়ার কথা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। কেমনে কি…।

      শুভেচ্ছা।

      Like

  8. ভাই কিছু প্রাসংগিক ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে চাই।
    ১। ছেলেরা সাধারনত রান্না করতে আগ্রহ পায় না। আমার পরিচিত গন্ডির মধ্যে এক আমি ছাড়া কোন ছেলে নাই যে কিনা রান্না করতে পছন্দ করে। আপনি কবে থেকে অনুধাবন করলেন যে রান্না-র উপরে আপনার স্পেশাল স্কিল আছে ?
    ২। কেউ একেবারে প্রথমেই শেফ বা ঘাগু রাধুনী হয়ে যায় না। করতে করতে ধীরে ধীরে হাত পাকা হয়। এছাড়া রান্নায় অন্য আরেকজন এর রান্নাকে ফলো করার টেন্ডেসি সবার থাকে। বিশেষ করে মায়ের রান্নার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারলেই নিজেকে সবাই স্বার্থক ভাবেন। আমি জানি আমি আপনার রান্নার পিছনে বিশেষ অবদান কার ? এ প্রশ্নে আপনি বলবেন, “মা” । তাই আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিভিন্ন রকমের দেশি-বিদেশি রান্না শিখতে গিয়ে কে বা কাদের সাহায্য সবচে বেশি পেয়েছেন? বা এত কিছু জানার গোপন রহস্য কি????

    আপনি জেনে খুশী হবেন, আমি আপনার ব্লগের নিয়মিত রিডার। কোন নতুন রেসিপি জানতে হলে সরাসরি আপনার ব্লগে চলে আসি। এছাড়াও প্রতিনিয়ত আমি শিখছি এবং চেষ্টা করছি গুরুজনদের কাছ থেকে যতটা পারা যায় শিখে নেবার। রান্নার প্রতি আগ্রহের কারনে Chef হতে পারাটা ক্যারিয়ার লিস্টে শুরুর দিকে চলে এসেছে।

    অনেক সময় কোন রান্না জঘন্য হয়েছে আবার কখনো হয়েছে অমৃত। নিজের রান্না করা খাবার কাউকে তৃপ্তি নিয়ে খেতে দেখলে মনটা আসলেই ভরে যায়। তাই বুঝি আমার মা হাসিমুখে এত্ত রান্না কিভাবে করতে পারে। এমন কাউকে এখনও পাইনি যে বলেছে “আমার মায়ের কোন রান্নার থেকে আমারটা সবচে ভালো হয়”।

    . . . ইন্সপাইরেশন এর জন্য পৃথিবীর সকল মায়েদের প্রতি সালাম। 🙂
    বিশাল এ লেখা কষ্ট নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

    Liked by 1 person

  9. ভাল লিখেছেন , কিছুদিন আগে অনলাইন থেকে নিলাম, ইদানিং অনলাইনেও শুটকি পাওয়া যায়, ভালই ছিল
    http://shutkibazarbd.com/

    https://www.facebook.com/shutkibazarbd/

    Liked by 1 person

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]