গ্যালারি

ভালবাসার চা শিল্প


লিখেছেনঃ সাহাদাত উদরাজী (তারিখঃ ১০ এপ্রিল ২০১২, ৮:১২ অপরাহ্ন)

গত কয়েকদিন ধরে আমার শিল্প ভাবনার নুতন বিষয় খুঁজছিলাম। কত কিছু কত বিষয় যে মনে আসে! কিন্তু সব বিষয় নিয়ে কি ভাবনা করা চলে কিংবা সব ভাবনার দ্বায়িত্ব কি আমার! না তা নয়, এদিকে আবার সব কিছুকেই কি আমরা শিল্প বলতে পারি! অনেকে অর্থাৎ হাইফাই লোকেরা আবার কি ভাববেন, কাকে শিল্প বলবেন, সে দিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের মত ভাবুকদের চলতে হয়। তবে শিল্পের একজন সাধারন ছাত্র হিসাবে আমি বলি, দুনিয়ার সব কিছুই শিল্প! এই ক্ষেত্রে আমার চোখে শিল্প দুই প্রকার, ভাল শিল্প এবং খারাপ শিল্প! উদাহরন দিয়ে বুঝা যাক, কবিতার কথাই আগে বলি! আপনি একটা কবিতা লিখলেন, এটা একটা পুরাই ফাটাফাটি শিল্প, শিল্পচর্চা। এখন আপনার এই কবিতাকে পাঠক বলতে পারেন, ভাল হয়েছে কিংবা খারাপ হয়েছে! এদিকে আবার শিল্পীর জন্য ভাল খারাপে কি আসে যায়! হ্যাঁ যায়, অনেক কিছু, এবিষয়ে আর একদিন! তবে শিল্প ভাবনার জন্য পজেটিভ মন প্রান থাকা দরকার মাত্র!

যাক যা বলছিলাম, কাজের কথায় আসি। আমার আজকের শিল্প ভাবনার বিষয় হচ্ছে, চা। চা নিয়ে প্রায় আমাদের অফিসে কথা হয়, সিনিয়র জুনিয়রদের মধ্যে। চা পান করেন না এমন কোন কলিগ আমি এই অফিসে এখনো খুঁজে পাই নাই। তবে আমাদের কোম্পানি আমাদের (এম্পোলয়ইদের) চা পান করায় না। আমাদের সাধারন কর্মীরা সাধারণত বাইরে রাস্তার ধারে যেয়ে চা পান করে আসেন আর আমরা যারা হালকা উপরে আছি তারা নিজেরা টাকা দিয়ে চা পাতা, চিনি, লেবু, আদা কিনে নিয়ে দিনে দুইবার চা পান করি। আমাদের অফিস এটেনডেন্ট এই কাজে আমাদের সাহায্য করে থাকে। আপনি সারা দিন যে প্রতিষ্ঠানে/অফিসে কাজ করেন, তারা আপনাকে এক কাপ চাও দেয় না। এমন আপনি না ভাবতে পারলেও আমি/আমরা পারি। এতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কোন লজ্জা নেই!

যাই হোক, আমার পাশে বসা ঢাকা মেডিক্যালের প্রফেসর স্যারের সাথে আমার খুব খাতির। আমি যে কোন বিষয় নিয়ে স্যারের সাথে কথা বলতে পারি। তিনি চায়ের মারাত্বক ভক্ত। শুধু গরম পানিতে এক চামচ চা পাতা দিয়ে নাড়িয়ে দিলেও তিনি কিছু না বলে তা পান করে নেন। কিন্তু চা না হলে, তার মুখের দিকে তাকানো যায় না! কেমন শুকনো শুকনো লাগে। তিনি এলেই আমি প্রায় উচস্বরে বলি, রনি স্যারের জন্য চা, জলদি। রনি যে চা বানায় তা, আমি মুখেই দিতে পারি না কিন্তু স্যার কখনো রনিকে কিছু বলেছেন বলে আমি মনে করতে পারি না। বিশেষ কথা হচ্ছে, গত কয়দিন থেকে রনি আর অফিসে আসছে না! আমাকে বলেছিল, নুতন একটা চাকুরীতে জয়েন করবে। আমি হাসি মুখে বলেছিলাম, যেতে চাইলে না করব না, তবে সে যেন সারা মাস চাকুরীটা করে রিজাইন লেটার দিয়ে চলে যায়। কিন্তু কে শুনে কার কথা! আজ অফিসে এসে জানতে পারলাম, রনি এক মেয়েকে বিবাহ করে পালিয়েছে! বুঝতে পারছি রনি কেন আমার মোবাইল ধরছে না! তবে রনির ঘটনায় আমি খুশি কারণ রনির হাতের বানানো চা আর আমাকে পান করতে হবে না!

আবারো যাই হোক, কাজের কথায় আসি। আপনি কোন বাসা বাড়ী অথবা প্রতিষ্ঠানে গেলেন আর সেখানে আপনি চা পান করলেন। চা যদি মজাদার হয় তবে চতুর্মাত্রিক সার্ভারের কসম, উক্ত বাসা বাড়ীর লোকজন অত্যান্ত ভাল, আপনি অনায়েসে তাদের আত্বীয় বানাতে/হতে পারেন অথবা উক্ত প্রতিষ্ঠানের সুনাম করতে পারেন প্রান খুলে। আজকের এমন বাদলা দিনে অফিসে বসে চা খেতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু কোথায় কি! কপালে না থাকলে ঘি, দরজায় ঘটঘট করলে লাভ কি?

তবে কিছু দিন আগে একটা প্রতিষ্ঠানে চা খাওয়ার একটা সৌভাগ্য হয়েছিল। তা আজ উল্লেখ করে যাই। চা যে শিল্প তা এই প্রতিষ্ঠান প্রমান করে চলছে এবং এই প্রতিষ্ঠানের চায়ের সুনাম দেশ ব্যাপি ছড়িয়ে পড়ছে বলে আমি মনে করি। ভালকে ভাল বলা উচিত। পরিচিত অনেকের মুখে তাদের এই চায়ের প্রশংসার কথা শুনে থাকি। গত বছর দুয়েক আগে আমার বড়ভাই/ভাবী চট্রগ্রাম থেকে এসে উক্ত প্রতিষ্ঠানে চা পান করেছিলেন এবং পরবর্তীতে আমার বাসায় এই চা নিয়ে বলেছিলেন। উক্ত প্রতিষ্ঠান চালু হবার পর থেকে আমিও দুইবার তাদের এই চা পান করেছি। আমার বেশ ভাল লেগেছে। সব চেয়ে বড় কথা, চায়ের মানদন্ড ধরে রাখা – রঙ ও স্বাদ! আমার দুইবারের পানে এটা মনে হয়েছে যে, ওরা ওদের টীবয়দের একটা চমৎকার শিক্ষা দিতে পেরেছে। চলুন ছবি দেখা যাক।


এভাবে চা আপনার সামনে হাজির হবে।


আহ কি রঙ! ইয়েলো!


চায়ের রঙ বুঝাতেই কি এমন কাপ প্রিজ ব্যবহার করা হয়?


আদাকুচি না লেমন চা!


চমুকেই তপ্তি! (মডেলঃ মমিনুল ইসলাম লিটন)


চা শেষে আদাকুচি দাঁতে দাঁতে চিবুতে পারেন। এমন চা দুকাপেও মানা নেই!


এতক্ষনে নিশ্চয় আপনাদের এই চা পরিবেশনের প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে ইচ্ছা হচ্ছে, হ্যাঁ, এই প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘দেশটিভি’। দেশটিভির অনেক ভাবনার সাথে আমি একমত না হলেও তাদের চা ভাবনার সাথে আমি সম্পূর্ন একমত। এক কাপ চা ই তো? আর সেটা কেন শিল্পের পর্যায়ে হবে না!

দেশটিভির ইয়েলো চা দীর্ঘজীবি হউক। দেশটিভির যারা এই প্রয়াসের সাথে আছেন, তাদের মঙ্গল কামনা করি, তাদের বুদ্দির তারিফ করি। এক কাপ চা ই হোক ভালবাসার অনন্য প্রতীক, বিরাট শিল্প।

8 responses to “ভালবাসার চা শিল্প

  1. এক কাপ গরম পানিতে চিনি নিয়ে একটা টি ব্যাগ ডুবিয়ে দিন, ব্যস হয়ে গেল চা!

    হা হা হা

    আপনার ব্লগে প্রথম কমেন্ট করে গেলাম, সাথে আমার ব্লগে দাওয়াত রইলো!

    Like

  2. চা আর কফি ছাড়া কি জীবন চলে?
    চা নিয়ে পোস্টটি ভাল তো লাগবেই। আর ছবিগুলো ছিল চমৎকার।

    Like

  3. পিংব্যাকঃ রেসিপিঃ আদা, পুদিনা ও লেবু চা (রং চা) | রান্নাঘর (গল্প ও রান্না)

  4. আমিও খাবো (মানে পান করবো ) 😐

    Like

    • ধন্যবাদ লুজার ভাই,
      যে কোনদিন দেশ টিভিতে চলে যান, একটা উচ্চুল্লা বের করে কথা বলুন। হা হা হা… দেশ টিভির চা এসে যাবেই! আর না হলে আমার এক বন্ধু আছে, তাকে বললেই চলবে।

      পান হয়ে যাবে। শুভেচ্ছা।

      Like

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]