গ্যালারি

হালিম/ শাহী হালিম


লিখেছেনঃ সাহাদাত উদরাজী (তারিখঃ ২ ডিসেম্বর ২০১১, ৬:০৮ অপরাহ্ন)

হালিম। বাংলাদেশের একটা মুখ রোচক খাবারের নাম। সকাল/বিকালের নাস্তায় কিংবা ইফতারিতে হালিম একটা বিশাল জায়গা দখল করে ফেলেছে। হালিম চেখে দেখে নাই এমন শহরবাসী খুব কমই আছে। তার উপর শহরের বড় বড় হোটেল গুলোতে বিকালে হালিম একটা নিধারিত আইটেম হয়ে গেছে। অনেকে হোটেলে গিয়েই নান রুটির সাথে হালিমের ওর্ডার দিয়ে দেন। এই সুযোগে মামা হালিম, নানা হালিম, জামাই হালিম, দাদু হালিম অনেক নাম কামিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি দেশের বড় ব্যবসাহীরাও বসে নেই, হালিম প্রিয়তার কারনে এখন গ্রোসারী শপে অনেক ব্যান্ডের হালিম মিক্স পাওয়া যায়। কিনে বাসায় নিন এবং রান্না করে মন ভরে খেয়ে দেখুন।

হালিমের সাথে আমার পরিচয় অনেক বছর আগের। গুলিস্থান এলাকায় খেলা দেখা এবং হারিয়ে যেতে আমরা বন্ধুরা যেতাম। সে গুলিস্থানে নানা পদের হোটেল ছিল। প্রায় সব হোটেলে হালিম পাওয়া যেত। আমরা হালিম খেতাম। আমার নাম মনে আছে, গুলিস্থান সিনেমা হলের উলটা দিকের রাস্তায় ‘রাজধানী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’ ছিল। হালিমের পাতিলের ঢাকনায় বারি (ড) দিয়ে বলত – হালিম, শাহী হালিম! এদিকে এদিকে।।। হালিম।।। শাহী হালিম। পাতিলের পেট লাল কাপড় দিয়ে মোড়ানো থাকত এবং নীচে হালকা আগুন থাকত। আবশ্য খেলা দেখে ফেরার পথে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে রাস্তার ধারের হালিমও খেয়েছি (টাকা কম থাকার কারনে)।

গত দুইদিন আগের কথা। বাসায় ছেলে মেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। আমার ‘ব্যাটারী’ জানালেন, বাড়ীর সবাইকে বিকালের নাস্তা করাতে হবে। আমাদের বাসায় রেডিমেট হালিমের প্যাকেট কেনা ছিল। আমি বললাম, হালিম তৈরী করে দিতে পার। ভাল লাগবে সবার। কথা মত কাজ। আমার ‘বুলেট’ ঘুমিয়ে পড়েছে তাড়াতাড়ি, পরীক্ষা শেষের দুষ্টামী কাকে বলে রে, কত প্রকার ও কি কি! রাত ১২টার পর আমরা কাজে লেগে গেলাম। পরদিন বিকালে বেশ জাম্পেস খাওয়া হল (সেখানে আমি ছিলাম না, পরদিন সকালে আমি হালিম দিয়ে নাস্তা করেছি)।

কিন্তু কথা থেকে যায়। গতকাল অফিসে এসে আমি মনের তাগিদে আরো কিছু জানতে ‘হালিম’ লিখে গুগল সার্চ দিতেই বেশ কিছু রেসিপি ভেসে উঠল। মাঝে একটা নাম/লিঙ্ক জ্বল জ্বল করে আমাকে তাড়িত করে দিল। আরে এ যে আমাদের কবি/অনুবাদক আহমাদ আবদুল হালিম। চতুর্মাত্রিক – বাংলা ব্লগ। একদম খাপে খাপ, মন্তাইজ্যার বাপ! আমার এই হালিম প্রচেষ্টা আমার প্রিয় হালিম ভাইকে উতসর্গ না করে কি পারা যায়! প্রথমেই বলে যাই, আমি হালিম ভাইয়ের অনুবাদের ভক্ত। আরবী থেকে তিনি যে অনুবাদ করেন তা আমাকে বিমোহিত করে (কাজটা সহজ নয়), আর তার নিজের লেখা কবিতার কথা কি বলব। কিছু বলার সাহস আমার নাই! এ ছাড়া হালিম ভাই এবং আমার মাঝে যে বিষয়টার একটা মত-মিল আছে, তা হচ্ছে আমরা দুইজনই গ্রাম ভালবাসি। আমি বুড়ো হলে এবং হালিম ভাই পড়া শেষ করেই গ্রামে চলে যেতে চান এবং চলেও যাবেন। লন্ডন না যেয়ে গ্রামে যে বসবাস করতে চায়, তাকে ভাল না বেসে উপায় নাই! আমি হালিম ভাইয়ের প্রসংশা করি। দিন দুনিয়ার মালিক তাকে অনেক বড় করুন।


যাই হোক কথা বাড়িয়ে আর কি হবে, আসুন হালিম রান্না শিখে কাজে লাগাই। প্রিয়জনদের মুখে প্রশংসা শুনি। আজ আমি হালিম ভাই সহ আপনাদের জন্য এনেছি প্যাকেট হালিম। হালিম রান্না খুব সহজ। ঘরে নানা ডাল/মশলা দিয়ে নিজেরাই হালিম তৈরী করতে পারেন কিন্তু আমি মনে করি বাজারে পাওয়া প্যাকেট হালিম ভাল। কষ্ট কম। ভাল স্বাদ হয়, দামেও সস্তা। এক প্যাকেটের দাম ৪০ টাকা, দুই প্যাকেট হলে গোটা ১৫ জন লোক খাওয়ানো যেতে পারে, আরামসে! নো টেনশন। হালিম প্যাকেটে ফয়েল দুটো প্যাকেট থাকে। একটায় থাকে মশলা, অন্যটায় থাকে মিক্স (ডাল, গম ও চাল)।

প্রধান উপাদান গুড়া মিক্স (বড় প্যাকেট);
– মসুরের ডাল
– মুগ ডাল
– ছোলার ডাল
– খেশারীর ডাল
– মাষ কলাই ডাল
– মটর ডাল
– গম (ময়দা বা গুড়া/ঝুর)
– সগন্ধি চাল (পোলাউ চালের গুড়া)
(একজন মাঝারী মানের রান্নাবিধও এই মিক্সটা নিজ হাতে করে ফেলতে পারবেন বলে আমি মনে করি)

মশলার প্যাকেটে মিক্স মসলাঃ
– মরিচ
– হলুদ
– ধনিয়া
– জিরা
– গোল মরিচ
– দারুচিনি
– এলাচি
– লবঙ্গ
– জয়ত্রী
– সরিষা
– মৌরী (আমি ভাল চিনি না)
– মেথি
(মুরগী রান্নার মশলার মতই, গরম মশলা সহ! খালি মেথি যোগ দেয়া হয়েছে)

অন্যান যোগ দেয়া আইটেমঃ
– লবন
– মনোসোড়িয়াম গুটাসেট (বানান ঠিক লিখতে পারছি না, মনে নেই) এই আইটেমটা মনে হয় ক্যামিকেল! স্বাদের জন্য মশ্লায় মিশিয়ে দেয়। এখানেই প্যাকেটজাত খাবারের একটা ব্যাপার। ঘরে রান্নায় এটার দরকার নেই।

পরিবেশনা আইটেমঃ
– আদা কুচি
– ধনিয়া পারা কুচি
– শসা (যদি থাকে, না হলে নাই)
– লেবু (মাস্ট আইটেম)
– কাঁচা মরিচ কুচি
– পেঁয়াজ বেরেস্তা
– বিট লবন

হালিম যে কোন গোসত দিয়ে হয়। গরু, খাসি কিংবা মুরগী। প্রথমে গোসত রান্না করে নিতে হয়, সে জন্য নিন্মের আইটেম গুলো লাগবেঃ
– যে কোন গোসত (গরু, খাসি কিংবা মুরগী) এক প্যাকেটের জন্য বলা আছে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম। কম বেশী হলে কি যায় আসে কে দেখবে?
– তেল (পরিমান মত)
– পেঁয়াজ (গোটা তিনেক)
– রসুন বাটা (সামান্য)

রন্ধন প্রনালীঃ


হালিমের প্যাকেট থেকে বড় প্যাকেট বের করে গরম পানিতে ডাল মিক্স ভিজিয়ে রাখুন।


হালিম পাতিলে তেল গরম করে পেঁয়াজ কষান, বাটা রসুন দিন।


কষানো হয়ে গেলে হালিম প্যাকেটে রাখা মশলা ঢেলে দিন এবং ভাল করে আবার কষান।


গোসত ঢেলে ভাল করে সিদ্ব করুন।


সিদ্ব হয়ে গেলে অন্য পাত্র রাখা ডাল মিক্স মিশিয়ে দিন।


ভাল করে নাড়ুন। ডাল দানা কিছু মজে মিশে যাবে কিছু থাকবে। ঘনত্ব কেমন চান, সেটা আপনার ইচ্ছা। মশলায় কিছু লবন দেয়া ছিল। এবার লবন চেক করুন। লাগলে দিন না লাগলে ‘ওকে’ বলুন।


হালকা আঁচ দিয়ে ফাকে বসে না থেকে অন্য কাজ গুলো করে ফেলতে পারেন। পরিবেশনা আইটেম গুলো সাজিয়ে নিন (আদা কুচি, ধনিয়া পাতা কুচি, লেবু (মাস্ট আইটেম), কাঁচা মরিচ কুচি, পেঁয়াজ বেরেস্তা, বিট লবন)


হালিমের রংটা শেষে এমন দেখাবে।


পুরা পাতিল সহ টেবিলে তুলে দিতে পারেন। বুফে টাইপ, যার যা লাগে নিয়ে খাবে।


কিংবা বাটিতে সাজিয়ে দিতে পারেন।


ছেলে মেয়েরা যেন ঝাল বেশী না নেয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।

(প্রিয় হালিম ভাই। কি চলবে আর এক বাটি!)

15 responses to “হালিম/ শাহী হালিম

  1. pronali ta r akto detail (jymon ato golo dal ar kotha bollyn.but dal gola ki korlyn bojlamnah.)holy valo hoto

    Like

  2. Aponer halim ranna dakha amer khaty issa korsay.

    Like

  3. আইসএীম বানান লিখবেন

    Like

  4. ধন্যবাদ ভাই 😀 আগামীকাল আমরা ও করবো। রান্নার পর আপনাকে জানাবো 🙂
    ওহ ধন্যবাদটা আগেই দিলাম।
    আমার ব্যাটারি রেসিপি খুজতেছিলো। আর আমি সরাসরি আপনার সাইটে চলে এলাম 🙂

    Liked by 1 person

  5. উদরাজী ভাই, ঐ উপকরণটা “মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট” হতে পারে, অর্থাৎ কিনা টেস্টিং সল্ট, যেটাকে আজিনোমোটো-ও বলে। আর রাঁধুনীর হালিম মিক্সটা আমাদেরও খুব পছন্দ, চমৎকার হালিম হয়! পাকিস্তানী শান এর “হালিম মিক্স” আর “কুইক হালিম মিক্স” ট্রাই করেছি, কোনোটাই রাঁধুনীর মত ভালো হয় না।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ রনি ভাই।
      বিদেশেও রাধুনী হালিম পাচ্ছেন জেনে আনন্দিত হলাম, একদিন আমাদের দেশের পন্য সারা বিশ্বে পাওয়া যাবে এটা কামনা করি। “মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট” বিষয়ে আমি তেমন জানি না, শরীরের জন্য এটা কেমন কার্যকর তা আমার জানা নেই। তবে এই ধরনের প্যাকেট খাবারে কিছুটা রাসায়নিক ব্যবহার করতেই হয়, নাইলে খাবার নষ্ট ও সুস্বাদু হয় না বলে শুনেছি।
      শুভেচ্ছা।

      Like

  6. হালিমে পানির পরিমান সর্ম্পকে কিছু বলেন নাই।

    Liked by 1 person

    • ধন্যবাদ মহিন ভাই, পানির পরিমান এক লিটারের সামান্য বেশি হলে ভাল। তবে শুরুতে এক লিটার দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। মাঝ পর্যায়ে বা শেষের দিকে ঘনত্ব দেখে আরো পানি (আগে গ্যোরম করে কিছু পানি রাখতে পারেন) যোগ করতে পারেন। আপনি হালিমের ঘনত্ব কেমন রাখবেন সেটা নিজেই নির্ধারন করতে পারেন। আশা করি বুঝতে পারছেন। শুভেচ্ছা নিন।

      Like

  7. খুবই ভাল পোস্ট। অনেক কিছু জানলাম। ধন্যবাদ ভাই।

    Liked by 1 person

[প্রিয় খাদ্যরসিক পাঠক/পাঠিকা, পোষ্ট দেখে যাবার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা। নিম্মে আপনি আপনার মন্তব্য/বক্তব্য কিংবা পরামর্শ দিয়ে যেতে পারেন। আপনার একটি একটি মন্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে কয়েক কোটি বার। আপনার মন্তব্যের জন্য শুভেচ্ছা থাকল। অনলাইনে ফিরলেই আপনার উত্তর দেয়া হবে।]